দার্জিলিঙের তুষার-চিতাবাঘ। — ফাইল চিত্র
সুদূর ফ্রান্সের চিড়িয়াখানা থেকে উড়ে আসছে সে। মাঝপথে কলকাতায় কিছুক্ষণের বিশ্রাম। তার পরে সে রওনা দেবে দার্জিলিঙের দিকে।
আগামী বুধবার এ রাজ্যে হাজির হবে এক নয়া অতিথি। আপাতত তার দিকেই চেয়ে রয়েছে দার্জিলিঙের পদ্মজা নায়ডু চিড়িয়াখানা।
কে এই অতিথি?
রাজ্য জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, এই নয়া অতিথি আদতে একটি পুরুষ ‘স্নো-লেপার্ড’ বা তুষার-চিতাবাঘ। তার নাম ‘নামখা’। বয়স দু’বছর। ৩১ অগস্ট সকালে ফ্রান্স থেকে উড়ানে চেপে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছবে সে। খানিক জিরিয়ে নিয়ে রওনা দেবে দার্জিলিং চিড়িয়াখানার তোপকেদারা কনজার্ভেশন ব্রিডিং সেন্টারের দিকে।
দার্জিলিং চিড়িয়াখানার অধিকর্তা পিয়ার চাঁদ জানান, বর্তমানে তাঁদের কাছে মোট ১০টি তুষার চিতাবাঘ রয়েছে। যার মধ্যে ২টি পুরুষ। এদের মধ্যে একটি আবার গত ২৪ জুন লন্ডনের ডুডলে চিড়িয়াখানা থেকে এসে পৌঁছেছে। ‘নামখা’ পৌঁছলে পুরুষ চিতাবাঘের সংখ্যা দাঁড়াবে তিন।
আদতে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা তুষার চিতাবাঘ। কিন্তু চোরাশিকারি এবং খাবার কমতে থাকায় ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে এরা। আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব নেচার’-এর (আইইউসিএন) বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় নামও রয়েছে এদের। সেই হিসেবেই বিশ্বের নানা জায়গায় এর সংরক্ষণ এবং প্রজনন প্রকল্প চালু রয়েছে। তুষার চিতাবাঘের সংরক্ষণ এবং প্রজননের ক্ষেত্রে বিশ্বে সুনাম রয়েছে দার্জিলিং চিড়িয়াখানারও। ১৯৮৩ সাল থেকে সেখানে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। এশিয়া মহাদেশে দার্জিলিঙেই প্রথম তুষার চিতাবাঘের সংরক্ষণ এবং প্রজননের প্রকল্প শুরু হয়।
চিড়িয়াখানা সূত্রের ব্যাখ্যা, পুরুষ ও মহিলা তুষার চিতাবাঘের সংখ্যায় ফারাক থাকায় প্রজনন প্রকল্পের অগ্রগতিতে খামতি থাকছিল। এই অবস্থায় ‘নামখা’ নামে দু’বছরের তুষার চিতাবাঘটি এলে সেই খামতি কিছুটা হলেও মিটবে। ‘‘নতুন পুরুষ স্নো-লেপার্ডটি এলে প্রজনন ঘটাতে সুবিধা হবে,’’ দাবি করছেন অধিকর্তাও।
কলকাতা থেকে কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তুষার চিতাবাঘটিকে?
এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানাননি চিড়িয়াখানার কর্তারা। তবে একটি সূত্র জানাচ্ছে, জুন মাসে আসা তুষার চিতাবাঘটিকে দার্জিলিঙে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বাতানুকূল অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার ভিতরেই খাঁচাসুদ্ধ চিতাবাঘটিকে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এতটা পথ যেতে যাতে সমস্যা না হয় বা শারীরিক ধকল না হয়, সে জন্য রীতিমতো আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করা হয়। চলার ফাঁকেই থাকে মাংস দিয়ে ভুরিভোজের ব্যবস্থাও। গলা ভেজাতে দেওয়া হয় জল-ওআরএস।