প্রতীকী ছবি।
স্মার্টফোনের মেসেঞ্জার অ্যাপ মারফত কারবার ফেঁদেছে চোরাশিকারিরা। সম্প্রতি বন দফতরের একটি তদন্তে তা সামনে এসেছে। ক্রিকেট-জুয়াতেও এ বার যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠছে অ্যাপ। আগামী মাসেই শুরু হতে চলেছে আইপিএল। তার আগেই অ্যাপে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রিকেট বেটিং চক্র।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, টেলিগ্রাম নামে একটি মোবাইল অ্যাপ মারফত দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা ক্রিকেট জুয়াড়িদের (ওদের ভাষায় ‘পান্টার’) যুক্ত করা হচ্ছে। মূল কারবারিরা বলছে, প্রত্যেক জুয়াড়িকে প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হবে অ্যাপ মারফত এবং সঙ্গে আশ্বাস, জুয়া়ড়ির পরিচয় সম্পূর্ণ ভাবে গোপন রাখা হবে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সিম থেকে ওই অ্যাপ ইনস্টল করে বেটিং চক্রের চাঁইয়েরা তা ‘ওয়াইফাই’ নেটওয়ার্ক দিয়ে চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ফোন নম্বর তাতে জড়িত। হোয়্যাটসঅ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে শুধু টেলিগ্রাম অ্যাপের ঠিকানা দিয়েই গ্রুপ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে হোয়্যাটসঅ্যাপ থেকেও তথ্য পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, খাস কলকাতা বা লাগোয়া শহরতলিতে বেটিং চক্র দীর্ঘদিনের। কোনও বড় মাপের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলেই বেটিং চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলে। বারবার ধরাও পড়েছে অনেকে। এই কলকাতা থেকেই উত্থান ক্রিকেট বেটিং জগতের ‘তারকা’ ‘জুনিয়র কলকাতা’র। তবে দীর্ঘদিন সে কলকাতা-ছাড়া। পরবর্তী কালে লেক টাউন, দক্ষিণ শহরতলির একাংশে হানা দিয়েও বেশ কিছু বুকিকে ধরা হয়েছে। মধ্য কলকাতার বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকাতেও ওই চক্রের সদস্যেরা সক্রিয়। পুলিশের একাংশের মতে, কোনও ফ্ল্যাটে বা ডেরায় বসে মোবাইল ফোনে বেটিং র্যাকেট চালানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে গিয়েছে জুয়াড়িরা। কারণ, ফোনের উপরে আড়ি পাতেন তদন্তকারীরা। তাই নেট দুনিয়ায় অ্যাপের মাধ্যমে এই কারবারের ফন্দি এঁটেছে তারা।
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, টেলিগ্রাম অ্যাপে নজরদারি চালানো বা আড়ি পেতে তথ্য জোগা়ড় করা কঠিন। কারণ, এই অ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরালো। তাই দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত সরকারি অফিসারেরা টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করেন। অপরাধীরাও করছে। অপরাধীরা যে ওই অ্যাপ ব্যবহার করছে, তার প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারাও। একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি ধরা পড়া নব্য জেএমবি গোষ্ঠীর জঙ্গিরাও এই অ্যাপ ব্যবহার করত। ‘‘এই অ্যাপে নম্বরের বদলে সাঙ্কেতিক নামও ব্যবহার করা যায়। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোন নম্বর থেকে তথ্য পাঠানো হচ্ছে, সেটা জানা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।
তা হলে কি কোনও ভাবে এই বেটিং চক্রের হদিস পাওয়া সম্ভব নয়?
পুলিশের একাংশ মনে করছে, ফোনে বা অ্যাপে আড়ি না-পেতেও ওই চক্রের হদিস পাওয়া সম্ভব। সে-ক্ষেত্রে বেটিং চক্রের অন্দরে থাকা সোর্স নেটওয়ার্ককে কাজে লাগানো জরুরি। অনেক সময় গোয়েন্দারা চর সেজে এই ধরনের চক্রে ঢুকে প়়ড়েন। সেখান থেকেও সূত্র মেলে। সেই সব বিকল্প পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপে মারফত সক্রিয় জুয়া চক্রের হদিস মেলে কি না, সেটাই দেখার।a