চুরির দায়ে জেলের সাজা, বিধায়ক পদ খোয়াবেন তৃণমূল নেতা?

বিধায়ক পদ খোয়াবেন কি রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি? রেলের সম্পত্তি চুরির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মঙ্গলবার আদালত তাঁর দু’বছর জেলের সাজা শুনিয়েছে। আর তার পর থেকেই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৮:২২
Share:

বিধায়ক পদ খোয়াবেন কি রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি? রেলের সম্পত্তি চুরির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মঙ্গলবার আদালত তাঁর দু’বছর জেলের সাজা শুনিয়েছে। আর তার পর থেকেই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

১৯৯৫তে রেলের সম্পত্তি চুরির ঘটনায় আরপিএফের হাতে বমাল ধরা পড়েন সোহরাব। এর পর রেল তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। প্রায় ২০ বছর শুনানি শেষে এই মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এ দিনের রায়ে আদালত সোহরাবের দু’বছরের সাজা এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার কথা ঘোষণা করে। ওই টাকা অনাদায়ে আরও দু’মাস সাজার মেয়াদ বাড়বে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরই তাঁর আইনজীবী আদালতের কাছে সোহরাবের জামিনের আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। আর তাতেই বিতর্ক দানা বাঁধে।

আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, যে হেতু তাঁকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে তাই শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সোহরাবের বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সোহরাবের আইনজীবী বলেন, ‘‘এটা ঠিক নয়। আদালত সাজা দিয়েছে বটে, কিন্তু আমার মক্কেলকে তো জামিনও পেয়েছেন। আদালত তাঁকে সেই সুযোগ দিয়েছে। কাজেই সাজা তো বহাল থাকছে না। আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করব।’’ যদিও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, নিম্ন আদালত যে হেতু সোহরাব আলিকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছে, কাজেই তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হওয়াই উচিত।

Advertisement

আরপিএফ-এর যে আইনে (৩এ আরইউপিসি) সোহরাবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, তাতে সর্বোচ্চ তিন বছর সাজা হতে পারত। আইনজীবীদের মতে, এই রায়ের পর উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন সোহরাব। এ দিন জামিন পেয়ে যাওয়ায় আপাতত তাঁকে জেলে যেতে না হলেও উচ্চ আদালত যদি এই রায় বহাল রাখে তবে শেষ পর্যন্ত সোহরাবকে জেলেই যেতে হবে।

দলীয় বিধায়কের জেলের সাজা শোনার পর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, আইন আইনের কাজ করেছে। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, সোহরাব যখন এই মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সেই ১৯৯৫-এ তাঁর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক ছিল না। সোহরাব তৃণমূলে যোগ দেন ২০০৯-এ। তার পর ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তিনি রানিগঞ্জের বিধায়ক হন।

সোহরাব আলির বিষয় নিয়ে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি টিভিতে খবরটা শুনলাম। তবে আদালতের নির্দেশ না দেখে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ তবে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া মনে করেন, ‘‘তৃণমূলে যে পাঁচমিশালি রাজনীতির মিশ্রণ ঘটেছিল, সাড়ে চার বছরের মধ্যেই তা ছাঁকনিতে ছাঁকা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনা নিশ্চিত ভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবহারিক জীবনে প্রভাব ফেলবে। অন্যান্য রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা আগে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে প্রথম।’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘রেলের সম্পত্তি চুরি করার পরেও সোহরাব আলি বহাল তবিয়তে তৃণমূলেই ছিলেন। তৃণমূলে এ ধরনের অজস্র লোক আছে। আসলে তৃণমূল এই ধরনের লোকেদেরই সমষ্টি। সৎ মুখ্যমন্ত্রী এখনই এ বিষয়ে বিবৃতি দিন।’’

সোহরাব মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সচিব। দু’ মাস আগে তাঁকে ওই পদে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ এবং ক্লাবের সভাপতি সুলতান আহমেদ। তবে এই ঘটনার পর সোহরাবের সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হবে বলে সুলতান জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন