— প্রতীকী চিত্র।
স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ চালানো এক প্রকার অসম্ভব! শনিবার কলকাতার কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এই অভিযোগ জানিয়েই বিক্ষোভ দেখালেন রাজ্যের বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার বা বুথ স্তরের আধিকারিক)-রা। তাঁরা জানালেন, অনেকের বাড়িতেই বাচ্চা রয়েছে। পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। মহিলা বিএলও-দের একাংশের আশঙ্কা, কাজের সময়ে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। রাজ্যের রাজনৈতিক দলের সদস্যদের থেকে কেউ কেউ হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। রাজ্য সিইও দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি এসআইআরের কাজও চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে শিক্ষকদের। এটাই নিয়ম। বিহারে এ ভাবে কাজ হলে এখানে কেন হবে না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে কমিশনের তরফে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার এসআইআর হচ্ছে। এই কাজে বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করবেন। শনিবার কলকাতার দু’টি জায়গায় বিএলওদের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। নজরুল মঞ্চের শিবিরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিএলও-দের একাংশ। তাঁরা জানিয়েছেন, চাকরির পাশাপাশি বিএলও-র কাজ করা সম্ভব নয়। যে কোনও একটা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হোক। যে সময় এসআইআরের কাজ করবেন তাঁরা, সে সময় ‘অন ডিউটি’ দেখানো হোক। স্কুলে যেতে হবে না, এমন অনুমতি দেওয়া হোক। এই দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বিএলও-দের একাংশ।
এক শিক্ষিকার বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা আছে। রাত ১০টার সময়ে কাজ করতে যেতে পারব না। অন ডিউটি দিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে। নয়তো এসআইআরের কাজ করব না। কত শিক্ষককে সাসপেন্ড করতে পারে করুক।’’ আর এক শিক্ষক জানিয়েছেন, অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকারই তিন-চার ঘণ্টা সফর করে স্কুলে যান। তার পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি করা কী ভাবে সম্ভব। স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি অনেক কাজ থাকে। বিএলওদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের নিশানা করছেন রাজনৈতিক দলগুলির সদস্যেরা। কেউ কেউ হুমকি পেয়েছেন। কাজে গিয়ে হামলার শিকার হতে পারেন বলে মহিলারা ভয় পাচ্ছেন। কমিশন জানিয়েছে, একটি বাড়িতে গিয়ে কোনও ভোটারকে না পেলে আবার সেই বাড়িতে যেতে হবে। এ ভাবে কোনও একটি বাড়িতে সর্বোচ্চ তিন বার যেতে হবে বিএলও-দের। এই নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএলও-দের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, এক জন বিএলও এত কাজ কী ভাবে এক সঙ্গে করবেন। তিন বার একটি বাড়িতে যাবেন, তার সঙ্গে স্কুলও সামলাবেন, যা এক প্রকার অসম্ভ। স্কুল কর্তৃপক্ষও ছাড়তে চাইবেন না। এক একটা স্কুল থেকে অর্ধেক শিক্ষককে বিএলও-র কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষকদের আশঙ্কা, স্কুলের পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়বে। ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতা দেখতে হবে তাঁদের। এই অবস্থায় এসআইআর-এর কাজ করা সমস্যার হবে।
কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ প্রতি বছর হয়। এসআইআর এ বছর হচ্ছে। নিজেদের কাজের পাশাপাশি এই এসআইআরের কাজও করতে হবে বিএলও-দের। কমিশনের একটি সূত্র বলছে, নিজের কাজের সঙ্গে এসআইআরের কাজও করতে হবে। এটাই নিয়ম। গোটা দেশেই এই নিয়ম জারি রয়েছে। বিহারে যদি এই ভাবে এসআইআর হয়ে থাকে, তা হলে এ রাজ্যের বিএলও-রা কেন পারবেন না? কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি দিন ১০টা পরিবারের কাছে গেলেই কাজ মিটে যাবে। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটে অন্তত আট থেকে ১০টি পরিবার থাকে। সে ক্ষেত্রে একটি পাড়ায় এক দিন গেলেই কাজ হয়ে যায়। কমিশনের পরামর্শ, শনি এবং রবিবার বেশি করে কাজ করলে সমস্যা হবে না। কমিশনের একটি সূত্র বলছে, এসআইআরের কাজের জন্য বিএলও-দের পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে। এককালীন ১২ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগে তাঁদের ৬ হাজার টাকা দেওয়া হত। বিএলও সুপারভাইজ়ার এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার টাকা।
বিএলও-দের একাংশ বলছেন, তাঁরা আগে এই নিয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তখন কমিশনের তরফে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা কখনওই এসআইআরের জন্য নিজের কাজ বন্ধ রাখতে বলেনি। সারা দেশেই এই নিয়ম রয়েছে। সূত্রের খবর, বিএলও-রা শনিবার যে অভিযোগ করেছেন, তা দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে।