বিক্ষোভের মোকাবিলায় অস্ত্র বদলি!

সংগঠনের ছাতার তলায় আন্দোলন করলেও যে ছাড় পাওয়া যাবে না, তা বুঝিয়ে দিল রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩১
Share:

থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মিছিল করে ফিরছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যরা। —নিজস্ব চিত্র

সংগঠনের ছাতার তলায় আন্দোলন করলেও যে ছাড় পাওয়া যাবে না, তা বুঝিয়ে দিল রাজ্য সরকার।

Advertisement

সম্প্রতি শাসক দল প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠনের এক নেতা এবং কো-অর্ডিনেশন কমিটির সমর্থক কয়েক জন সরকারি কর্মচারীকে এক ধাক্কায় বদলি করা হয়েছে। শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দমকলকর্মীদের জন্য গড়া হবে কল্যাণ পর্ষদ। এই সিদ্ধান্তের ফলে ওই বিভাগেও সংগঠনগুলির অস্তিত্ব কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়ল।

বকেয়া মহার্ঘ ভাতা, ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু-সহ বিভিন্ন দাবিতে বৃহস্পতিবার সব সরকারি অফিসে বিক্ষোভ-কর্মসূচি নিয়েছিল কো-অর্ডিনেশন কমিটি। দুপুরে আচমকা নবান্নে ঢুকে বিক্ষোভ দেখান ওই কমিটির সদস্যেরা। শুক্রবার কো-অর্ডিনেশন কমিটির চার সমর্থক তথা সরকারি কর্মচারীকে উত্তরবঙ্গে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সমবায় দফতরের কর্মী বিশ্বজিৎ গুপ্তচৌধুরী রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। তাঁদের প্রত্যেককেই সোমবারেই নতুন জায়গায় যোগ দিতে হবে। সংগঠন সূত্রের খবর, আপাতত চার জন বদলি হলেন। পরে অনেকের বিরুদ্ধেই এই পদক্ষেপ করা হতে পারে।

Advertisement

ঘটনাচক্রে এ দিনই কালনার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চাই না, সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপি করেন বলে আপনার চাকরি চলে যাক। কিন্তু আপনাকেও মনে রাখতে হবে, চাকরি করলে জনগণের কাজ করতে হবে। বাড়িতে ঘুম থেকে উঠে এসে শুধু ‘দিতে হবে দিতে হবে’ বলে আন্দোলনের নাম করে বাংলাটাকে শেষ করা আপনাদের কাজ নয়। সরকার বলছে, টাকা চায় না। আপনি বলছেন, টাকা চাই। কে আপনি? কে আপনাকে এই অধিকার দিয়েছে? আমি মনে করি, এখনও অনেক সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, যাঁরা জীবন দিয়ে কাজ করেন। আর সিপিএমের কিছু আছেন, যাঁদের নেই কাজ তো খই ভাজ!’’

কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ জানান, বদলি হওয়া প্রত্যেকেই বিক্ষোভ-কর্মসূচিতে ছিলেন। ‘‘সরকারের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। আন্দোলন আরও তীব্র হবে,’’ বলেন বিজয়বাবু।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের কর্মী তথা তৃণমূল প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের কোর কমিটির সদস্য এবং ফেডারেশনের সচিবালয়ের শাখার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব পালকে পরিবহণ দফতরে বদলি করেছে সরকার। এই বদলিও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বলে মনে করছে সংগঠন এবং প্রশাসনের একাংশ। কারণ, কয়েক দিন আগে হুগলির চুঁচুড়ায় সংগঠনের এক সভায় সঞ্জীববাবু বলেছিলেন, ‘‘৩৪ বছরের জমানাতেও এত অত্যাচার আমাদের সহ্য করতে হয়নি। আমরা মহাকরণে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলন করেছি। অসীম দাশগুপ্তের ঘরের কোলাপসিবল দরজা ভেঙেছি। আমাদের কেউ বরখাস্ত হয়নি, কেউ বদলি হয়নি। ইউনিয়ন করার অধিকারই যদি চলে যায়, তা হলে আমরা দাবি আদায় করব কী করে!’’ সঞ্জীববাবুর মন্তব্যের এই ভি়ডিয়োটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।

শুক্রবার দমকলকর্মীদের জন্য পৃথক কল্যাণ পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। কর্মচারীদের স্বার্থে কী কী করা প্রয়োজন, এ বার পর্ষদই সেই প্রস্তাব দেবে সরকারের কাছে। কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, অতীতে পুলিশ ও কারার মতো এ বার দমকল দফতরেও সংগঠন করার অধিকার থাকবে না। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে দমকলমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই কাজ করে সংগঠন। সরকার যখন নিজেই এগিয়ে আসছে, তখন সংগঠন করার আর কী দরকার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন