প্রতীকী ছবি।
স্বাস্থ্যের অসুখ সারানোর উদ্যোগ পর্বেই উঁকি মারছিল আশঙ্কার অঙ্কুর। অচিরেই সেটা সত্যি হয়ে ওঠার রাস্তা নিয়েছে! আইন তৈরি হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার অপব্যবহার। নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনের অপব্যবহার এমনই মাত্রা নিয়েছে যে, পরিষেবার মূল্য না-চুকিয়ে রোগী নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে বহু হাসপাতালে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই আইনে। ওই সব হাসপাতালে সেবার নামে নির্বিচার অর্থ শোষণের যে-সব অভিযোগ ওঠে, তার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জেরে তাঁদের ভুগতে হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল অনেক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের মনে। কলকাতা, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের অভিযোগ, ওই আইনকে হাতিয়ার করে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্ল্যাকমেলিং।
ওই সব হাসপাতালের অভিযোগ, চিকিৎসার পরে টাকা না-দিয়ে রীতিমতো চোটপাট করে রোগী নিয়ে চলে গিয়েছেন আত্মীয়েরা। অনেক ক্ষেত্রে আবার টাকা চেয়ে পাল্টা হুমকি শুনতে হয়েছে হাসপাতালকে। একটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ‘‘আমাদের বলা হয়েছে, পুলিশের কাছে গেলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। অনেকে এক ধাপ এগিয়ে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন।
বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটাল অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত পনেরো দিনে টাকা না-দিয়ে চলে গিয়েছেন বেশ কিছু রোগী। বকেয়া টাকার পরিমাণ ৭৫ লক্ষ। একটি হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, যে-সব রোগীর আতিমীয়স্বজন টাকা দিচ্ছেন না, বাধ্য হয়েই তাঁদের সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টাওয়ার মিলিয়ে ঘুষের খোঁজে সিবিআই
বুধবার পথ-দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ইএম বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন এক যুবক। অভিযোগ, চিকিৎসার পরে টাকা চাইলে তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা সাফ জানিয়ে দেন, জরুরি পরিষেবার জন্য তাঁরা কোনও টাকা দেবেন না। সল্টলেকেও একটি বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে বহু রোগী চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার পরে টাকা দিচ্ছেন না। এমনকী বাংলাদেশ থেকে আসা বহু রোগী চিকিৎসার পরে টাকা না-দিয়েই চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
এই অবস্থা চললে হাসপাতালে পরিকাঠামোর উন্নতি তো দূরের ভাবনা, কর্মীদের বেতন মেটানো মুশকিল হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নবান্নের চক্ষুশূল হওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না তাঁদের অনেকেই। অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি পিএন মেহতা বলেন, ‘‘অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করব। কী ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, বৈঠকেই সেই রাস্তা খুঁজতে হবে।’’
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা অবশ্য জানান, ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের অপব্যবহার রুখতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সক্রিয় হয়েছেন। ভুল অভিযোগ করলে অভিযোগকারীর শাস্তি হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ করলে স্বাস্থ্যকর্তারা নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখবেন।