রাজ্যের সব জেলে কয়েদিদের খাবার কিনতে হবে ক্যাশলেস কার্ডে!

‘ক্যাশলেস’ কার্ডে মিলবে খাবার। বন্দিদের জন্য তেমনই ব্যবস্থা করছে কারা দফতর। মাস দু’য়েক আগে দমদম সেন্ট্রাল জেলে ‘ক্যাশলেস কার্ড’ চালু হয়।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ ও রাজীব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

ডিজিটালের পথে জেল!

Advertisement

তবে তাড়াহুড়ো করে নয়। ধাপে ধাপে রাজ্যের সব জেলে বন্দিদের খাবার বা অন্য জিনিস কেনার জন্য কুপন ব্যবস্থা উঠে যেতে চলেছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনও ভাবেই নগদে লেনদেন করা যাবে না।

‘ক্যাশলেস’ কার্ডে মিলবে খাবার। বন্দিদের জন্য তেমনই ব্যবস্থা করছে কারা দফতর। মাস দু’য়েক আগে দমদম সেন্ট্রাল জেলে ‘ক্যাশলেস কার্ড’ চালু হয়। সেখানে সপ্তাহ দু’য়েক ধরে এই ব্যবস্থা চলেছিল। তা যথেষ্টই সফল হয়েছিল বলে দাবি কারা দফতরের কর্তাদের। সেই সাফল্যকে সঙ্গী করে পরবর্তী পর্যায়ে হেঁটেছেন তাঁরা। তাই দমদমের পরে বর্তমানে তা চালু হয়েছে আলিপুর মহিলা জেলে। সেখানে অবশ্য পুরোদমে ক্যাশলেস কার্ডেই খাবার কিনতে পারছেন চারশো জন বন্দি। আলিপুর মহিলা জেলে ‘ক্যাশলেস’ ব্যবস্থা সফল হলে আরও বেশি সংখ্যক বন্দি থাকা জেলে তা শুরু করা হবে বলে স্থির করছে কারা দফতর। এক কারা কর্তার কথায়, ‘‘ক্যাশলেস কার্ডে কী কী সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে, তা যাচাই করতে আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে এই ব্যবস্থা চলছে। সব পরীক্ষা ঠিকঠাক হলে রাজ্যের ৬০টি জেলে ক্যাশলেস ব্যবস্থা চালু হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দু’বছর মামলার পরে ক্ষতিপূরণ বিমা সংস্থার

এই কার্ড কী ভাবে ব্যবহার হবে? বন্দিদের হাতে ক্যাশলেস কার্ড দেওয়া হবে। ক্যান্টিনে রাখা থাকবে সোয়াইপ মেশিন। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেন জেল কর্তৃপক্ষ। সেখানেই জমা হয় তাঁদের পারিশ্রমিক। ক্যাশলেস কার্ডটি সোয়াইপ করলে সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা কাটা যাবে। আর বিচারাধীন বন্দিদের ক্ষেত্রে তাঁদের বা তাঁদের আত্মীয়ের ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্টের সঙ্গে ক্যাশলেস কার্ড যুক্ত (লিঙ্ক) করা থাকবে। কার্ড ব্যবহার করলে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা হবে। এক জনের কার্ড যাতে অন্য জন ব্যবহার করতে না পারেন, তার জন্য কার্ডে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থাও থাকবে।

এখন জেলের ক্যান্টিন থেকে নগদ টাকা দিয়ে খাবার কিনতে হয় বন্দিদের। কুপন ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। সেই কুপনের জন্য পরিজনদের থেকে টাকা নিতে হয় বন্দিদের। সেই টাকা দিয়েই খাবারের জন্য কুপন সংগ্রহ করতে পারেন বন্দিরা। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠে, জেলের মধ্যেই কেউ কেউ বন্দিদের থেকে টাকা আদায় করছেন। তবে শুধুমাত্র টাকা আদায় করার অভিযোগই নয়। কুপনকে ব্যবহার করে অপরাধ ঘটানোর প্রবণতাও রয়েছে বন্দিদের। তেমনই বলছেন কারা দফতরের কর্তাদের অনেকে। তাঁদের কথায়, ‘‘এক বন্দি হয়তো সরাসরি অন্য কাউকে ভয় দেখাতে বা মারধর করতে পারবেন না। মারধর বা ভয় দেখানোর জন্য ওই কুপনকে অনেকে ব্যবহার করছেন। কারণ, কুপনটা তো পরোক্ষে টাকাই।’’ জেলে নগদ লেনদেন বন্ধ করা গেলে অনেক সমস্যাই মিটবে বলে আশাবাদী কারা কর্তাদের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, এখন জেলের ক্যান্টিনে প্রচুর টাকার কেনাকাটা হয়। লেনদেনের হিসেব রাখাও কষ্টকর। নগদ টাকার লেনদেন কমানো গেলে সেই সমস্যা থাকবে না। তবে কার্ডের ব্যবহার এখনই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না বলে জানান দফতরের এক আধিকারিক।

ক্যাশলেস কার্ড বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত— সব বন্দিকে দেওয়া হবে। জামিন পেয়ে বা সাজার মেয়াদ অতিক্রম করার পরে জেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কার্ডটি জমা দিয়ে যাবেন। কার্ডে ব্যালান্স থাকলে তা ওই সময় তাঁর হাতে দিয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন