বর্ষার মন পেতে জোরদার ঘূর্ণাবর্তের আশায় দক্ষিণবঙ্গ

অতিগভীর নিম্নচাপের হ্যাঁচকা টানে শেষ পর্যন্ত কোনও ভাবে রাজ্যে ঢুকলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও থিতু হতে পারেনি সে। জুনের শুরু থেকে শনিবার পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার ঘাটতি ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৩:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি

ক্যালেন্ডার বলছে, আষাঢ়ের সবে শুরু। ঝকঝকে নীল আকাশের বুকে সাদা পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ানো মেঘ বিভ্রান্ত করছে, বর্ষা ঋতুটাকে বেমালুম টপকে শরৎ কি এসে গেল! ঘরে-বাইরে সারা ক্ষণ জবজবে ঘাম অবশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, বর্ষার স্বস্তি নয়। শরতের প্রসন্নতাও নয়। গুমসুম দহনই আপাতত দক্ষিণবঙ্গের বিরক্তিকর বাস্তবতা।

Advertisement

বর্ষা যে এসে গিয়েছে, রোজই তার সজল প্রমাণ পাচ্ছে উত্তরবঙ্গ। জাঁকিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে সেখানে। ঘেমেনেয়ে অস্থির দক্ষিণবঙ্গের প্রশ্ন, এ দিকে বরুণদেবের কৃপাদৃষ্টি পড়বে কবে? দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, এ বছর রাজ্যে ঢুকতে গিয়ে এমনিতেই হোঁচট খেয়েছে বর্ষা। অতিগভীর নিম্নচাপের হ্যাঁচকা টানে শেষ পর্যন্ত কোনও ভাবে রাজ্যে ঢুকলেও দক্ষিণবঙ্গে এখনও থিতু হতে পারেনি সে। জুনের শুরু থেকে শনিবার পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার ঘাটতি ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

তা হলে কি বর্ষার এই আগমন নেহাতই খাতায়-কলমে?

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতর অবশ্য এতটা নিরাশ হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধতে চলা একটি ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরে জোরালো বর্ষণের আশা করছে তারা। ‘‘কাল, মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে ব়ৃষ্টি বা়ড়বে,’’ বলেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

বর্ষা প্রসন্ন না-হলেও দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির চাহিদা কিছুটা হলেও মেটাচ্ছে বজ্রগর্ভ মেঘ। রেডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানান, এ দিন বিকেলে পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনার মতো উপকূলীয় জেলাগুলির একাংশে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার গভীর রাতেও উত্তর শহরতলির কিছু কিছু এলাকায় এক পশলা ব়ৃষ্টি, দমকা হাওয়া বয়েছিল। কিন্তু তা মোটেই বর্ষার বৃষ্টি নয়!

আরও পড়ুন: অ্যালোপ্যাথি কি আয়ুষেও, বিভ্রান্তি তুঙ্গে

বর্ষার এ বার এমন দশা কেন?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের ব্যাখ্যা, জুনে সাধারণত দক্ষিণবঙ্গে তেমন বৃষ্টি হয় না। এখানে বর্ষণের আসল সময় জুলাই ও অগস্ট। তবে বঙ্গোপসাগরে কোনও নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির জোর বাড়ে। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে গণেশবাবুরা সেই ধরনেরই একটি ঘূর্ণাবর্তের দানা বাঁধার ইঙ্গিত পেয়েছেন। আজ, সোমবার জন্ম নিতে পারে সেই ‘অতিথি’।

আবহবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, জুনে বর্ষার এমন দুর্দশা আসলে বর্ষার চরিত্র বদলেরই ইঙ্গিত। খাতায়-কলমে জুনে বর্ষা শুরু হলেও ক্রমেই তা পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার চেনা সেই ঝিরঝিরে দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিও তেমন হচ্ছে না। বরং অল্প সময় হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি হচ্ছে কোথাও কোথাও। পরিবেশবিদদের একাংশ জানান, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ু বদল নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীন সংস্থা ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টেও এই ইঙ্গিত রয়েছে। আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য উপায় দেখছে না হাওয়ামোরগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন