যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে পদক্ষেপ দক্ষিণ পূর্ব রেলে

১০টা ২৫ মিনিটের আপ মেচেদা লোকাল হাওড়া স্টেশনের ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে শুনে দৌড় লাগালেন নিত্যযাত্রীরা। মূল স্টেশন চত্বর থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব অনেকটা। ছুটে না গেলে ট্রেন ‘মিস’ হওয়ার আশঙ্কা ষোলোআনা।

Advertisement

নুরুল আবসার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৫:৩২
Share:

১০টা ২৫ মিনিটের আপ মেচেদা লোকাল হাওড়া স্টেশনের ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে শুনে দৌড় লাগালেন নিত্যযাত্রীরা। মূল স্টেশন চত্বর থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দূরত্ব অনেকটা। ছুটে না গেলে ট্রেন ‘মিস’ হওয়ার আশঙ্কা ষোলোআনা।

Advertisement

ট্রেনে উঠে অনেকে আসনে শরীর এলিয়ে দিলেন। অবশ্য এটাই প্রতিদিনের ছবি। আসনে বসতে না বসতেই চোখে ঘুমও জড়িয়ে এল। কিছুক্ষণ পর ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল। যাঁদের চোখ জুড়িয়ে এসেছিল, তাঁদের ঘুম ছুটে গেল মিষ্টি গলায় এক মহিলার ঘোষণা শুনে, ‘নমস্কার। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে আপনাকে স্বাগত। ট্রেনটির গন্তব্যস্থল মেচেদা। পরবর্তী স্টেশন টিকিয়াপাড়া’। সচকিত যাত্রী, তবে কী মেট্রোয়! ভুল ভাঙল নিমেষেই। দেখলেন মাথার উপরেই লাগানো ছোট্ট মাইক্রোফোন থেকে ভেসে আসছে ওই ঘোষণা। নিজের অজান্তেই যাত্রীটির গলা থেকে বেরিয়ে এল ‘বাঃ, এটা তো দারুণ’।

শিয়ালদহ বিভাগের পূর্ব রেলে চালু হয়েছিল আগেই। এ বার দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার লোকাল ট্রেনেও চালু হয়ে গেল যাত্রীদের জন্য তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। শুধু ট্রেনের ভিতরে মাইক্রোফোনে ঘোষণাই নয়। ভিতরে প্রতিটি কামরায় বসানো হয়েছে ডিসপ্লে বোর্ড। তাতেও থাকবে ট্রেনটির গন্তব্যস্থল, বর্তমানে ট্রেনটি কোন স্টেশনে রয়েছে, পরবর্তী স্টেশন কোনটি।

Advertisement

শুধু তাই নয়, ট্রেনের সামনে এবং পিছনের কামরায় বাইরের দিকে দু’টি ডিসপ্লে বোর্ড থাকবে। সেখানে থাকবে কোন কোন স্টেশনে ট্রেনটি থামবে সেই সংক্রান্ত তথ্য। এ ছাড়াও কোন কামরা প্রতিবন্ধীদের জন্য এবং কোন কামরা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত, থাকবে সেই তথ্যও। অর্থাত্‌ যাত্রীরা ট্রেনে উঠেও যেমন অনেক তথ্য জানতে পারবেন তেমনই ট্রেনে ওঠার আগেও ট্রেনটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে প্রতিদিন ১৮৪ জোড়া লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে ৯১ জোড়া আপ এবং ৯৩ জোড়া ডাউন ট্রেন। কয়েক লক্ষ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন। বিশেষ করে অফিস টাইমে সকাল ও সন্ধ্যায় ট্রেনগুলিতে তিলধারণের জায়গা থাকে না। ভিড়ে চাপে যে সব যাত্রী ট্রেনের ভিতরের দিকে থাকেন নামাওঠার সময় তাঁদের অবস্থা বেশ করুণ হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট স্টেশন কখন আসবে তার হদিস পেতে অনেক সময় সহযাত্রীদের শরণাপন্ন হতে হয়। এমন ঘটনাও ঘটে, স্টেশন চলে এলেও অনেকে নামতে পারেন না। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় যাত্রীরা অনেক আগে থেকেই জেনে যাবেন সামনে কোন স্টেশন আসছে। ফলে তিনি ধীরে সুস্থে ট্রেন থেকে নামতে পারবেন। রাতের দিকে হাওড়া থেকে টিকিয়াপাড়া স্টেশনের মাঝে ট্রেন একাধিকবার বিভিন্ন কারণে দাঁড়িয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী স্টেশন এসে গিয়েছে ভেবে ফাঁকা জায়গাতেই ট্রেন থেকে নেমে পড়তে উদ্যত হন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। নতুন ব্যবস্থায় সেই প্রবণতা কমবে বলে রেল আশা।

হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে মোট ৩০টি ট্রেন রয়েছে। তার মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দু’টি ট্রেনে নতুন তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যাত্রীরাও বেজায় খুশি। তাঁরা চাইছেন বাকি ট্রেনগুলিতেও এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাক। এ বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “আপাতত দু’টি ট্রেনে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আরও চারটি ট্রেনে খুব শীঘ্র এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।” পর্যায়ক্রমে সব লোকাল ট্রেনেই এই পরিষেবা চালু হয়ে যাবে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর। একইসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানিয়েছেন, আধুনিক তথ্য পরিষেবার এই ব্যবস্থা চালু রাখতে যাত্রীদেরও সহায়তা প্রয়োজন। কারণ দুষ্কৃতীরা ডিসপ্লে বোর্ডের বা সাউন্ড সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে। একমাত্র যাত্রীদের নজরদারিই এই ব্যবস্থা সুষ্ঠভাবে চালু রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন