দক্ষিণের কড়চা

আবৃত্তি। কিন্তু শহরের আর পাঁচটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো নিছক মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা বলার নিপুণতা নয়। এ বার আবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হল সেতার। শুধু সেতার বললে ভুল হবে, আবৃত্তির বিষয় অনুযায়ী আলাপ, জোড়, ঝালা। সম্প্রতি গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন শহর শ্রীরামপুরের লিটল ম্যাগাজিন ‘ঐকতান’-এর ৬০ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে টাউন হলে আয়োজিত উৎসবে সুরের সঙ্গে কবিতার এমনই মেলবন্ধন চাক্ষুষ করা গেল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

সুর-ছন্দের যুগল বাঁধনের একটি মুর্হূত। নিজস্ব চিত্র।

সেতারের সুরে ফুটল কবিতা

Advertisement

আবৃত্তি। কিন্তু শহরের আর পাঁচটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো নিছক মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা বলার নিপুণতা নয়। এ বার আবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হল সেতার। শুধু সেতার বললে ভুল হবে, আবৃত্তির বিষয় অনুযায়ী আলাপ, জোড়, ঝালা। সম্প্রতি গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন শহর শ্রীরামপুরের লিটল ম্যাগাজিন ‘ঐকতান’-এর ৬০ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে টাউন হলে আয়োজিত উৎসবে সুরের সঙ্গে কবিতার এমনই মেলবন্ধন চাক্ষুষ করা গেল। আবৃত্তি শোনালেন নন্দিতা সিংহ। সেতার হাতে যোগ্য সঙ্গত করলেন ধ্রুব বাগচী। পত্রিকার সদস্যরা জানালেন, আবৃত্তি-সেতারের যুগলবন্দির পরিকল্পনা মূলত ধ্রুববাবুর মস্তিষ্কপ্রসূত। আসলে তিনি এ বার অন্যরকম ভাবে ভাবতে চেয়েছিলেন। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। আবৃত্তিকার নন্দিতাদেবীর সঙ্গে মহড়ায় বসে গেলেন তিনি। মহড়াতেই যুক্ত হল আরও নতুন ভাবনা। সেতারের তালে তালে পরিবেশিত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারটি কবিতা। আবৃত্তি আর সেতারের এমন হাত-ধরাধরি দেখে দর্শকমণ্ডলী উচ্ছ্বসিত। চমক এখানেই শেষ নয়। পত্রিকার সম্পাদক নবতিপর শচীন দত্তের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য দর্শকমনে ছাপ রেখে গিয়েছে। উৎসবের মঞ্চে উদ্বোধন করা হল পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, কয়েকটি গ্রন্থ। সেতার-কন্ঠের যুগলবন্দি ছাড়াও ছিল ‘শব্দনীরে’র সমবেত আবৃত্তি। মহিলারা ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ নামে নাটক মঞ্চস্থ করেন।

Advertisement

বনলতার উদ্যোগ

জেলার কবি-সাহিত্যিকদের সংবর্ধনা দিল বনগাঁর সাহিত্য পত্রিকা ‘বনলতা’। প্রয়াত কবি বিশ্বনাথ মৈত্র, নির্মল মুখোপাধ্যায়, যাত্রা শিল্পী কানাই নাথ-সহ আট জনের স্মরণে পুরস্কারগুলি দেওয়া হয়। গত রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় বনগাঁ মহকুমা শাসকের সভাগৃহে হয়ে যাওয়া এই অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন দীপা ব্রহ্ম। তাঁর গলায় লালনগীতি উপস্থিত সাহিত্য অনুরাগীদের মন ভরিয়ে দেয়। স্বরচিত গল্পপাঠ করেন শশাঙ্ক দে। প্রকাশিত হয় পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা। পুরস্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন কান্তিময় ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষ-সহ আট জন কবি-সাহিত্যিক। উদ্বোধক ছিলেন কবি অমিতাভ গুপ্ত। পত্রিকার সম্পাদক সুশোভন দত্ত জানান, এলাকার প্রয়াত কবি-সাহিত্যিকদের স্মরণেই এই অনুষ্ঠানের ভাবনা।

কোরকের হরিচরণ

স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টিকেই মানুষ বেশি মনে রাখে। - এই সত্যটা বোধহয় 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও খাটে। কিন্তু এই সংকলনটি খুঁজে বের করতে চায় মানুষ হরিচরণকে। ‘কোরকে’র ‘হরিচরণ’ সংকলনে তাঁর প্রতিদিনের যাপনের একটা ছবি মেলে। চব্বিশ পরগনার যশাইকাটিতে হরিচরণের ছেলেবেলার কথা, শান্তিনিকেতন বা পতিসরে রবীন্দ্র-সান্নিধ্যের দিনগুলো- সবই রয়েছে সংকলনে। প্রমথনাথ বিশী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়দের লেখাগুলির পুনমুদ্রণে সম্পাদক তাপস ভৌমিকের যত্নের ছাপ রয়েছে। লেখাগুলি থেকে অভিধানকারের জীবনের কয়েকটি অলিখিত দিকের হদিস মেলে। উপরি পাওনা হরিচরণের কয়েকটি দুর্লভ ফোটোগ্রাফ ও স্কেচ।

আমতায় সাহিত্যপাঠ

সম্প্রতি সাহিত্য সম্মেলন করল আন্দুল থেকে প্রকাশিত দৃপ্ত সৃজন পত্রিকা এবং নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আন্দুল-মৌড়ি শাখা। অনুষ্ঠানটি হয় আমতায়। সাহিত্য পাঠ ছাড়াও ছিল গান।, আলোচনার বিষয় ছিল, ‘‘বর্তমান সমাজে আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা।’’

লোকসংস্কৃতির সিধুজ্যাঠা

ঘনিষ্ঠজনেরা বলেন, গবেষকের পায়ের তলায় সর্ষে রয়েছে। তিষ্ঠোতে পারেন না। লোকসংস্কৃতি সম্পর্কিত সামান্যতম আভাস টুকু পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজে। তিনি ৬৮ বছরের সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা এই প্রবীণ গবেষকের সঙ্গে জঙ্গলমহলের লোক সংস্কৃতির নাড়ির যোগ। লোধা উপজাতির লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প ‘চাঙ’ নাচের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে তাঁর হাত ধরেই। এক সময় সুবর্ণরৈখিক এলাকায় ঘুরে ঘুরে লুপ্তপ্রায় প্রাচীন লোধা লোক যাত্রাপালার পান্ডুলিপিও উদ্ধার করেছেন তিনিই। শুভানুধ্যায়ীরা বলেন, তিনি লোকসংস্কৃতির সিধুজ্যাঠা। আদিম জনগোষ্ঠী সম্পর্কে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখেছেন সাতটি গ্রন্থ। নয়ের দশকে অখ্যাত শীতলামঙ্গল-সহ লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতির উপর গবেষণা করে পিএইচডি করেছিলেন। বেতার ও দূরদর্শনের মাধ্যমে তাঁর সুরলিত কণ্ঠের শীতলা গান জঙ্গলমহল ছাড়িয়ে দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। গুপ্তমণি থেকে গোপনন্দিনী, কালুয়াষাঁড় থেকে কনকদুর্গা— লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন পরম্পরার পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের লোকায়ত ও শাস্ত্রীয় ধর্মাচরণের ইতিহাসের প্রামাণ্য কথকও সেই তিনিই। জঙ্গলমহলের লোকায়ত দেবদেবীর স্বরূপ সন্ধানের পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের হারিয়ে যাওয়া লোকায়ত বিনোদন নিয়েও সুব্রতবাবুর গবেষণা আজও অব্যাহত। সম্প্রতি হুগলির শেওড়াফুলি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে সুব্রতবাবুর নতুন গবেষণা গ্রন্থ ‘জঙ্গলমহলের কুঠার মানুষ’। বইটিতে আদিম অরণ্যচারী লোধা-শবর জনজাতি সম্পর্কে সরল ভাষায় আলোচনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন