তড়িঘড়ি সুবহানকেই চাঁই বলেছিল এসপি-র রিপোর্ট

কওসরের জন্য রবিবারই পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। সিআইডি যত দূর তদন্ত করেছে তাতে খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম প্রধান কুশীলব হিসেবে উঠে এসেছে শাকিল আহমেদ ও কওসরের নাম। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্ধমানের পুলিশ সুপারের দেওয়া রিপোর্টে বিস্ফোরণে নিহত সুবহান ওরফে স্বপন মণ্ডলকে কেন ওই দলের ‘মাস্টার মাইন্ড’ বা মাথা বলে উল্লেখ করা হল, এখন তা নিয়ে ধন্দে পড়েছে এনআইএ।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

কওসরের জন্য রবিবারই পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। সিআইডি যত দূর তদন্ত করেছে তাতে খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম প্রধান কুশীলব হিসেবে উঠে এসেছে শাকিল আহমেদ ও কওসরের নাম। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্ধমানের পুলিশ সুপারের দেওয়া রিপোর্টে বিস্ফোরণে নিহত সুবহান ওরফে স্বপন মণ্ডলকে কেন ওই দলের ‘মাস্টার মাইন্ড’ বা মাথা বলে উল্লেখ করা হল, এখন তা নিয়ে ধন্দে পড়েছে এনআইএ।

Advertisement

২ অক্টোবর বিস্ফোরণ হয়। বর্ধমানে পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা ৩ অক্টোবর রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি-সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠান। চার পাতার ওই রিপোর্টের দু’নম্বর পাতার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “সুবহান মণ্ডল ওরফে স্বপন মণ্ডলের (২৪) বাবার নাম দীপক ওরফে বিপ্লব মণ্ডল। তার সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সে-ই ছিল দলটির মাথা এবং একই সঙ্গে বোমা, বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী।”

বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে জড়ানো গলায় সুভান জানিয়েছিল, তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তরপাড়ায়। কিন্তু সেই জেলায় ওই নামে কোনও গ্রাম না পেয়ে পুলিশ শেষ পর্যন্ত উত্তরবাড় গ্রামের গোপাল মণ্ডলের বাড়িতে যায়। গোপালবাবুর ছেলে গৌতম বেশ কিছু দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। গৌতমই সুবহান কি না, প্রাথমিক ভাবে সে ধন্দে ছিল পুলিশ। কিন্তু সব জল্পনায় জল ঢেলে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন গৌতম। ফলে, সুবহানের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে।

Advertisement

বর্ধমানের পুলিশ সুপার অবশ্য রবিবার দাবি করেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে আমাদের মনে হয়েছিল, সুবহানই ওই চক্রের মাথা। তাই আমরা সেই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছিলাম। রিপোর্টে শাকিল বা কওসরের উল্লেখও ছিল। পরে তদন্তে ওদের ভূমিকাটাই সামনে চলে আসে।”

এসপি-র রিপোর্টে উল্লিখিত ওই তথ্যের সঙ্গে কিন্তু এনআইএ এবং সিআইডি-র তদন্তে পাওয়া তথ্য মিলছে না। এনআইএ সূত্রের খবর, সিআইডি তাদের জানিয়েছে, খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় জেহাদি জঙ্গিরা একটি পুরোদস্তুর অস্ত্র ও বিস্ফোরকের কারখানা তথা গবেষণাগার চালাচ্ছিল। যার মাথা ছিল বাংলাদেশ থেকে সাত বছর আগে এ দেশে আসা শাকিল আহমেদ। গত ২ অক্টোবর বিস্ফোরণে শাকিল মারা যায়। শাকিলই যে কারখানাটি চালাত, সেটা বিভিন্ন নথি ও তথ্য থেকে এবং ধৃত দুই মহিলা আলিমা বিবি ও রাজিয়া বিবিকে জেরা করে জানা গিয়েছে বলে এনআইএ-কে সিআইডি জানিয়েছে। রাজিয়া আবার শাকিলের স্ত্রী এবং তার তিন সন্তানের মা।

তা ছাড়া, জেহাদি জঙ্গিদের এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা মডিউলে কওসরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে এনআইএ গোড়া থেকেই সন্দেহ করছে। তাদের ধারণা, খাগড়াগড়ে বসে ‘ইমপ্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি) তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার টাকা শাকিলদের দিয়ে যেত কওসরই। কত আইইডি কোন সময়ে লাগবে, তার বরাতও দিত কওসর এবং আইইডি তৈরির পরে সে-ই ওই বাড়ি থেকে সেগুলি নিয়ে যেত। যেমন নিয়ে গিয়েছিল ১ অক্টোবর, বিস্ফোরণের আগের দিন।

এনআইএ-র বক্তব্য, কারা আইইডি-র বরাত দিত, খাগড়াগড় থেকে আইইডি কোন পথে, কোথায় গিয়ে পৌঁছত এবং কারাই বা এ সবের জন্য বিপুল অর্থের জোগান দিত সে সবই নিশ্চয়ই কওসরের জানা। এই চক্রের শিকড়ে পৌঁছতে কওসর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্যই তাকে হাতে পেতে পাঁচ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এনআইএ। কওসরের হদিস দিতে পারলে বা তাকে ধরতে সাহায্য করবে এমন তথ্য দিতে পারলে ওই টাকা পাওয়া যাবে।

তা হলে বর্ধমানের এসপি-র রিপোর্টে যে সুবহান ওরফে স্বপন মণ্ডলকে চক্রের মাথা ও বিস্ফোরক তৈরিতে ওস্তাদ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল, তার সম্পর্কে সিআইডি এবং এনআইএ কী বলছে? এনআইএ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যে সব নথিপত্র মিলেছে, তাতে সুবহান মণ্ডলকে পদমর্যাদায় শাকিলের উপরে থাকা কেউ বলে মনে হচ্ছে না। আবার তাদের বক্তব্য, ঘটনার মাস দেড়েক আগে খাগড়াগড়ের ওই আস্তানায় থাকতে শুরু করেছিল সুবহান। বিস্ফোরকের ব্যবহার |বুঝে নিয়ে আইইডি তৈরিতে সুবহান সবে হাত পাকিয়েছিল বলে সিআইডি-র দাবি। তাঁদের অনুমান, সুবহান আরও একটু ধাতস্থ হয়ে যাওয়ার পরে, তাকে দিয়ে নতুন আর একটি গবেষণাগার গড়ে তোলার ছক ছিল শাকিলের।

সে ক্ষেত্রে এসপি-র রিপোর্টে কেন সুবহানকেই চক্রের চাঁই ও বিশেষজ্ঞ বলে উল্লেখ করা হল, সেটাই প্রশ্ন তদন্তকারীদের। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে পর্যাপ্ত তথ্য হাতে পাওয়া যাবে না সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সুবহানের নাম তড়িঘড়ি চাঁই হিসেবে উল্লেখ করার কি আদৌও দরকার ছিল?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন