ফুটবল খেলেও কবিতা লেখা যায়, বললেন স্প্যানিশ কবি

কিছু দিন আগে কয়েকটি জনপ্রিয় রবীন্দ্র কবিতার ভাষান্তরে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর দেশ স্পেনের প্রকৃতির মধ্যে বাঙালি কবির সৃষ্টির ব্যঞ্জনা তখনই আবিষ্কার করেছিলেন ফ্রান্সিসকো মুনিয়েজ সোলের। রবীন্দ্রনাথের শহরে বইমেলায় বক্তৃতা দিতে এসে সোমবার এ সব বলছিলেন স্প্যানিশ বিশ্বে বহুপঠিত এই কবি।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৩
Share:

বইমেলায় ফ্রান্সিসকো মুনিয়েজ সোলের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কিছু দিন আগে কয়েকটি জনপ্রিয় রবীন্দ্র কবিতার ভাষান্তরে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর দেশ স্পেনের প্রকৃতির মধ্যে বাঙালি কবির সৃষ্টির ব্যঞ্জনা তখনই আবিষ্কার করেছিলেন ফ্রান্সিসকো মুনিয়েজ সোলের।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথের শহরে বইমেলায় বক্তৃতা দিতে এসে সোমবার এ সব বলছিলেন স্প্যানিশ বিশ্বে বহুপঠিত এই কবি। বইমেলার গত তিন দশকের গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ ‘অশোককুমার সরকার স্মৃতি বক্তৃতা’র মঞ্চে ওঠার আগে আলাপচারিতায় তিনি বললেন, ‘‘সন্তান বিয়োগের পরে প্রকৃতির মধ্যে তাকে খুঁজতে চাওয়ার রবীন্দ্রচেতনা আমার খুব চেনা মনে হয়েছিল।’’ এর পরই গত অর্ধশতকে স্প্যানিশ কবিতার অভিযাত্রা নিয়ে বলতে উঠবেন সোলের। বইমেলার ‘কোস্টা রিকা’ থিম প্যাভিলিয়নে প্রধানত স্প্যানিশ ভাষার পড়ুয়া, সাহিত্যপ্রেমী গবেষক, অনুবাদকদের ভিড়। তাঁদের মাঝে দাঁড়িয়ে সোলের বললেন, ‘‘যুগোপযোগী ও সমাজের উপযুক্ত হতে কবিতাকে কিন্তু খণ্ডিত পরিসর থেকে বেরিয়ে বিশ্বজনীন হতে হবে।’’

তাঁর মুখ থেকে স্প্যানিশ কবিতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস শুনে সেটি বাংলা তর্জমা করছিলেন ইন্দো-হিসপ্যানিক ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকাডেমির ছাত্রী সপ্তমী ঘোষ। আজন্ম স্পেনের মালাগা শহরের বাসিন্দা, রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য কবি শোনালেন, স্পেনে আজকের কবিরা কী ভাবে একই সঙ্গে কবি, গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক হয়ে উঠেছেন। প্রধানত তাঁর কবি বন্ধু ফ্রান্সিসকো মোরালেস ও আলবার্তো তরেসের গবেষণার সূত্র ধরেই স্প্যানিশ কবিতার বিবর্তন নিয়ে বলছিলেন সোলের।

Advertisement

তবে আলোচনা নিছকই কবিতার গণ্ডিতে আটকে থাকল না। স্পেনের দক্ষিণে আন্দালুসিয়ার সঙ্গে উত্তরের অংশের রাজনৈতিক বিরোধ নিয়েও প্রশ্ন ধেয়ে এল তাঁর দিকে। এ সব কচকচিতে ঢুকতে চাননি ষাট ছুঁই ছুঁই কবি। ফের বললেন, ‘‘কবিতার জগৎ সীমান্তহীন। যে কোনও মানুষই আদতে বিশ্বনাগরিক। এ সব ছাড়ুন, একটা প্রেমের কবিতা পড়া যাক্!’’

২০ বছরে ২৩টিরও বেশি বই লিখেছেন। অনূদিত হয়েছেন ইংরেজি, ইতালীয়, আরবিতে। বাংলাতেও তাঁর ‘লাতিদো ইন্তিমো’ (গভীর হৃদ্স্পন্দন)-এর অনুবাদের কাজ করছেন দিব্যজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, মানববন্ধু বেরা প্রমুখ। সেই প্রবীণ কবির প্রেমের কবিতা শ্রোতাদের মধ্যে এক ধরনের সংশয়দীর্ণ রোম্যান্টিক বিধুরতা ছড়িয়ে দিল।

বক্তৃতার ফাঁকে ‘অ্যান অরফ্যান ইন দ্য সিটি অব প্যারাডাইজ’ কবিতাটি পড়লেন সোলের। স্নিগ্ধ রাতের আবেশও সেখানে চারিয়ে যায় ভাঙাচোরা দুনিয়ার বিষাদ। তাঁর কবিতা জুড়েই বিশ্বজনীন এক যন্ত্রণার যোগ। রবীন্দ্রনাথ-প্রসঙ্গে সোলের বলছিলেন, ‘‘ওঁর ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা তত বুঝি না আমি।’’ কিন্তু ‘প্রশ্ন’ বা শেষ দিকে সত্তার পরিচয় খোঁজা সংশয়দীর্ণ রবীন্দ্রনাথ যেন তাঁর পরমাত্মীয়।

জোড়াসাঁকো, মাদারহাউজ, কফিহাউজ থেকে কুমোরটুলির সরস্বতী মূর্তি— সবই ঘুরে দেখেছেন সোলের। কলকাতা তাঁর আর একটি পরিচয়ও এ দিন জানতে পারল। প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচ সোলেরের দুই শিষ্য ‘আতলেতিকো কালকুতা’য় খেলেছেন। বইমেলা থেকে বেরোনর আগে তিনি হাসলেন, ‘‘ফুটবল খেললে কবিতা লেখা যায় না, ভাববেন না! ফুটবলেও কবিতার রস মিশে বিলক্ষণ!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement