ধর্মঘট উঠলেও ট্যাক্সি-বিবাদে যুযুধান মন্ত্রী-নেতা

রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে ট্যাক্সি-ধর্মঘট উঠে গিয়েছে মঙ্গলবারই। আর এ দিনই ট্যাক্সি নিয়ে নতুন বিড়ম্বনা সরকারের। খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বচসায় জড়িয়ে পড়লেন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহর সঙ্গে। দু’পক্ষের প্রায় হাতাহাতি হওয়ার আগেই অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে মন্ত্রী এবং ট্যাক্সিমালিক সংগঠনের নেতা দু’জনেই দু’পক্ষকে দোষারোপ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

ট্যাক্সি নিয়ে মন্ত্রীর বৈঠক, সঙ্গে উত্তেজনাও। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে ট্যাক্সি-ধর্মঘট উঠে গিয়েছে মঙ্গলবারই। আর এ দিনই ট্যাক্সি নিয়ে নতুন বিড়ম্বনা সরকারের। খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বচসায় জড়িয়ে পড়লেন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহর সঙ্গে। দু’পক্ষের প্রায় হাতাহাতি হওয়ার আগেই অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে মন্ত্রী এবং ট্যাক্সিমালিক সংগঠনের নেতা দু’জনেই দু’পক্ষকে দোষারোপ করেছেন। মন্ত্রীর দাবি, “অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে বৈঠকের সময় নষ্ট করছিলেন বিমলবাবু। সে কারণে তাঁর বক্তব্য থামিয়ে দেন উপস্থিত ট্যাক্সিচালকেরাই।” আর বিমলবাবুর অভিযোগ, “আমি ভাড়া বৃদ্ধি-সহ ট্যাক্সিচালকদের বিভিন্ন দাবি তুলতেই মন্ত্রী এগিয়ে এসে হাত থেকে মাইক কেড়ে নেন। আমাকে অপমান করা হয়েছে। তার পরেই আমাদের সংগঠনের সবাই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে চলে আসি।” যদিও বিমলবাবুর বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা অস্বীকার করা হয়েছে সরকারের তরফে।

Advertisement

তৃণমূলপন্থী ট্যাক্সিমালিক সংগঠন-সহ ট্যাক্সিচালকদের এ দিন বৈঠকে ডেকেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সেখানে বৈঠকে ডাকা হয় বিমলবাবুকেও। নেতাজি ইন্ডোরে ওই বৈঠকে মন্ত্রী ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে তাঁদের বিভিন্ন সুবিধে-অসুবিধে নিয়ে কথা বলছিলেন। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার দাবি, “ট্যাক্সিচালকেরা কেন বারবার ধর্মঘট করছেন, তা বুঝতেই ওই বৈঠক হয়।”

সেখানে বিমলবাবু বক্তব্য রাখতে যাওয়ার সময়েই গোলমাল বাধে। তৃণমূলপন্থী ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা শম্ভুনাথ দে বলেন, “বিমলবাবু বক্তব্য রাখতে গিয়ে হঠাৎই ট্যাক্সির সমস্যা ছেড়ে তাঁর মোটর ড্রাইভিং স্কুলের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এতেই ট্যাক্সিচালকেরা চটে গিয়ে তার বিরোধিতা করেছেন।”

Advertisement

বিমলবাবু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি প্রথমে বলি ভাড়া বৃদ্ধির কথা। সরকারি স্ট্যান্ডের দাবি জানাই। মন্ত্রী কেন প্রাইভেট গাড়ি চালাতে দিচ্ছেন, তারও বিরোধিতা করি। এমনকী ধর্মঘটে আটক গাড়ি কবে ছাড়া হবে, তা-ও জানতে চাই। চালক ও মালিকেরা আমাকে সমর্থনই জানান। তাতেই খেপে যান মন্ত্রী।” মদনবাবু সাফ জানিয়ে দেন, কালীপুজোর আগে ট্যাক্সিভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।

মন্ত্রীর সঙ্গে বিমলবাবুর বচসা নেতাজি ইন্ডোরের ভিতর থেকে বাইরে চলে আসে। বিমলবাবুরা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চিৎকার করতে করতে স্টেডিয়ামের বাইরে চলে এলে পিছন পিছন বেরিয়ে আসেন মদনবাবুও। বিমলবাবু ও তাঁর অনুগামীরা তখন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে দেন। মদনবাবু এবং তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ট্যাক্সিমালিকেরাও বিমলবাবুকে পাল্টা হুমকি দিতে শুরু করেন। দু’জনেই দু’জনকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দেন। শেষমেশ পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষীরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।

পরে বিমলবাবু জানিয়েছেন, সামনেই দুর্গাপুজো বলে তিনি এখনই এর প্রতিবাদে কোনও আন্দোলনে নামছেন না। কিন্তু ট্যাক্সির দাবি নিয়ে অক্টোবরের ২৭ তারিখের পরে ফের আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা করেছেন তাঁরা। প্রয়োজনে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গেও তিনি ধর্মঘটে যেতে পারেন বলেও হুমকি দেন বিমলবাবু। এমনকী, পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আর কখনও বৈঠক করবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রীও এ দিন পাল্টা জানিয়ে দেন, ফের ট্যাক্সি ধর্মঘট ডাকা হলে সরকার তা কড়া হাতেই মোকাবিলা করবে।

এমনিতে পরিবহণ দফতরে মদন মিত্রের সঙ্গে বিমল গুহর সুসম্পর্ক রয়েছে বলেই সবাই জানেন। আচমকা সেই দু’জনের ঝামেলায় হতবাক দফতরের অনেকেই।

পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “সিটু, আইএনটিইউসি, বিএমএস-সহ বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি বিমলবাবুরা। কিন্তু তলে তলে ধর্মঘট সফল করার জন্য ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে সাহায্য করছিলেন বলেই খবর। তাতেই মন্ত্রীর সঙ্গে বিমলবাবুর সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল।” তার জেরেই এ দিনের গোলমাল বলে দাবি ওই কর্তার। যদিও মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। এ দিনের সভায় উপস্থিত মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ এক ট্যাক্সিমালিকের দাবি, “ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলন সফল হওয়ায় বিমলবাবু অনেক দিন ধরে প্রচারে নেই। সে কারণেই এখন নাটক করে প্রচারে আসতে চাইছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন