CPIM

CPIM: ধ্বস্ত অর্থনীতিতে ধর্মঘট, ধর্ম সঙ্কটে বঙ্গের বাম

লকডাউন এবং করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত জনজীবনের উপরে টানা দু’দিনের ধর্মঘটের খাঁড়া নামিয়ে আনা উচিত কি না, এই প্রশ্ন উঠেছে বাম শিবিরের অন্দরেই।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

এক দিকে সাবেক হাতিয়ার হাতছাড়া করতে না চাওয়া। অন্য দিকে আবার পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে নিয়মিত সরব থাকা। একসঙ্গে এই দুই রাস্তায় চলতে গিয়ে আপাতত ধর্ম-সঙ্কট বামে!

Advertisement

আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ধর্মঘটের ডাককে কেন্দ্র করে রীতিমতো ধর্ম-সঙ্কট বঙ্গের বাম শিবিরে! কেন্দ্রীয় সরকারের মারণ অর্থনীতি, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ-সহ ‘জনবিরোধী নীতি’র বিরুদ্ধে আগামী ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। সিপিএমের সিটু, সিপিআইয়ের এআইটিইউসি-সহ নানা বাম সংগঠনই সেই ধর্মঘটের আহ্বানে শামিল। কিন্তু লকডাউন এবং করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত জনজীবনের উপরে টানা দু’দিনের ধর্মঘটের খাঁড়া নামিয়ে আনা উচিত কি না, এই প্রশ্ন উঠেছে বাম শিবিরের অন্দরেই। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের বড় অংশই চাইছেন, বাংলায় অন্তত সাধারণ ধর্মঘটের বদলে শিল্প ধর্মঘটের পথে যেতে। তাতে যদি শ্যাম ও কূল, দুই রক্ষা পায়!

অপরিকল্পিত লকডাউন করে খেটে খাওয়া মানুষ, বিশেষত অসংগঠিত শ্রমিকদের পথে বসিয়েছে মোদী সরকার, এই অভিযোগে সব চেয়ে বেশি সরব বামপন্থীরাই। লকডাউন যে সমাধান নয়, বরং আরও বেশি সমস্যার কারণ— করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে এ রাজ্যেও সেই যুক্তি সামনে রেখে মুখর ছিল সিপিএম। সংক্রমণ রোখার নামে অপরিকল্পিত ভাবে নানা জায়গায় বাজার-দোকান বন্ধের প্রতিবাদও তারা করছে। অথচ সেই পরিস্থিতির মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে দু’দিনের ধর্মঘট নিজেদের যুক্তিতেই যে ‘স্ব-বিরোধী’ হয়ে উঠতে পারে, তা বুঝতে পারছেন এ রাজ্যের সিপিএম নেতাদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ বার রাজ্যে লকডাউন করেননি। এর পরে ধর্মঘটের তিনি বিরোধিতা করলে ‘মোদীর বিরুদ্ধে ধর্মঘটের কেন বিরুদ্ধে যাচ্ছে তৃণমূলের সরকার’— এই প্রশ্নও ধোপে টেকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তার উপরে ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যে একগুচ্ছ পুরভোট রয়েছে। বিজেপির সঙ্গে টক্কর দিয়ে রাজ্যে বিরোধী পরিসর ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ের সময়ে দু’দিনের ধর্মঘট বামেদের পক্ষে যাবে কি না, তা-ও ভাবতে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে।

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘কিছু অসুবিধা অবশ্যই আছে। তবে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ভাবে। কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চও গ্রামীণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে রেখেছে। কেন্দ্রীয় স্তরে কথা বলে কতটা কী করা যায়, দেখতে হবে।’’ বেশ কয়েক বছর আগে এ ভাবেই ফেব্রুয়ারিতে দু’দিনের ধর্মঘট ডেকেছিল শ্রমিক সংগঠনগুলি। তার মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারিও পড়েছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন সক্রিয় হয়ে ‘ভাষা দিবস’ ঘিরে বাংলার আবেগকে সামনে রেখে এ রাজ্যে ধর্মঘট এক দিনে নামিয়ে আনিয়েছিলেন।

শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘কেন্দ্রের ভুল অর্থনীতির জন্য প্রান্তিক অংশের যে বিপুল সংখ্যক মানুষ ৩৬৫ দিন কষ্টে আছেন, তাঁরাই অভুক্ত থেকেও ধর্মঘট করবেন। এক-দু’দিনের ধর্মঘটে ধনী অংশের জীবনে কোনও প্রভাব পড়ে না। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করে, দাবি জানিয়ে সরকার কথা শোনেনি বলেই এই পথে যেতে হচ্ছে। বিপজ্জনক অর্থনীতির কারণে সারা বছর যাঁদের সঙ্কট, এক-দু’দিনে তাঁদের আর নতুন ক্ষতি কী হবে?’’

মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা, না ‘মৃদু লাঠি’— এখন ভাবতে হচ্ছে সিপিএমকে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement