BJP

Nabanna: বন্‌ধ রাজ্য সরকারের ‘নীতিবিরুদ্ধ’, সব খোলা থাকবে সোমবার, স্পষ্ট জানাল নবান্ন

রাজ্যের ১০৮ পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৪১
Share:

ফাইল চিত্র।

সোমবার বাংলায় কোনও বন্‌ধ হবে না। স্কুল-কলেজ-দোকানপাট-যান চলাচল— সব কিছুই স্বাভাবিক থাকবে। রাজ্য বিজেপি-র ডাকা সোমবারের বন্‌ধের প্রেক্ষিতে রবিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এমনটাই জানানো হল রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন থেকে। রবিবারের পুরভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। যদিও নবান্নের স্পষ্ট ঘোষণা, সাধারণ মানুষকে জোরজবরদস্তি বন্‌ধ করতে বাধ্য করা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। একই বার্তা দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়।

Advertisement

রবিবার সন্ধ্যায় নবান্নের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয়েছে, বন্‌ধের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকায় প্রভূত প্রভাব পড়ে। এই সংস্কৃতি রাজ্য সরকারের ‘নীতিবিরুদ্ধ’। তাই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রোজকার মতোই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, দোকান, বাজার, কারখানা সবই স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। যান চলাচলও স্বাভাবিক রাখা হবে। বন্‌ধের কারণে কোনও সরকারি কর্মচারী ছুটি পাবেন না। যদি কোনও কর্মী অনুপস্থিত থাকেন, তা হলে তাঁর বেতন কাটা যাবে। রাজ্য সরকারের স্পষ্ট বার্তা, বন্‌ধ সফল করতে গিয়ে কোনও ভাবে সরকারি (কেন্দ্র ও রাজ্য দুইই) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কারখানা, বাজার, দোকান খোলার ক্ষেত্রে যদি বাধা দেওয়া হয় এবং স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়, তা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি-র তরফে বন্‌ধের ঘোষণা হতেই রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জরুরি বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সমস্ত জেলাশাসক, সব পুলিশ জেলার সুপার এবং কমিশনারেটগুলির কমিশনারদের নিয়ে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। বন্‌ধ রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়েই এই বৈঠক বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

রবিবার রাজ্যে পুর নির্বাচন ছিল। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি বলে বিরোধীরা দিনভর নানা অভিযোগ তুলেছে। বিজেপি-ও সেই দলে ছিল। বিকেলে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হতেই গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু বন্‌ধ ডাকাই নয়, তা সফল করতে রাজ্যের সর্বত্র বিজেপিকর্মীরা পথে নামবেন। বিজেপি-র অভিযোগ, রবিবার শাসকদল গায়ের জোরে ভোট করিয়েছে। বহু জায়গায় ভোট লুঠ হয়েছে। তা রোখার চেষ্টা না করে পুলিশ কোথাও নীরব দর্শকের মতো আচরণ করেছে, আবার কোথাও তৃণমূলকে সহযোগিতা করেছে। বিজেপি-র দাবি, সব পুরসভাতেই ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘অবাধে ভোট লুঠ হবে, কেউ ভাবেনি। আবার নির্বাচন হওয়া উচিত।” ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, “নির্বাচন কমিশনারকে গ্ৰেফতার উচিত। এই সরকারকে রেখে কোনও নির্বাচন সম্ভব নয়।’’

যদিও বিরোধীদের তোলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট এলে তার পরই বলা সম্ভব ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে কি না।

রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়ও জানিয়েছেন, মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মোটের উপর শান্তিপূর্ণই হয়েছে ভোট। কোথাও গুলি চলেনি। অশান্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে।’’ বিজেপি-র ডাকা বন্‌ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত বেসরকারি ও সরকারি দফতর খোলা থাকবে। পরিবহণ একেবারেই স্বাভাবিক থাকবে। আমরা সমস্ত রকম ভাবে প্রস্তুত থাকব। কেউ যদি কোথাও জোর করে বা সাধারণ মানুষকে বাধা দেয় আমরা খুব কঠোর ভাবেই সেখানে ব্যবস্থা নেব।’’

শুধু সরকার নয়, শাসকদলের তরফেও বিজেপি-র ডাকা এই বন্‌ধের বিরোধিতা করা হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি-র ডাকা এই বন্‌ধের আমরা বিরোধিতা করছি। আগামী কাল সব কিছু সচল থাকবে। সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে, এমন কোনও কিছুকে আমরা সমর্থন করি না। মানুষকে বিপদে ফেলে অর্থনীতি ধ্বংস করা এই বন্‌ধের আমরা সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি।” তিনি আরও বলেন, “যারা ভোটে কিছু করতে পারে না, তারাই এ ভাবে অশান্তি আর গোলমাল পাকাতে বন্‌ধ ডাকে। রাজ্য প্রশাসন সম্পূর্ণ ভাবে সচল থাকবে। গোলমাল করতে গেলে প্রশাসন কড়া হাতে তার মোকাবিলা করবে।”

বিজেপি-র বন্‌ধের পাল্টা বিকেল ৪টেয় মিছিলের ডাক দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় বন্‌ধের সংস্কৃতি নেই। বাংলায় কোনও বন্‌ধ হবে না। বাস ও ট্যাক্সি চালকেরা নির্দ্বিধায় রাস্তায় নামবেন।’’

বিজেপি-র ডাকা বন্‌ধকে প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে বাম-কংগ্রেসও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিজেপি বাংলা বন্‌ধ ডাকবে আর আমরা সমর্থন করব, এটা ভাবা ঠিক নয়। আমরা আন্দোলনের সঙ্গে থাকি। আজ সারা দিন বিজেপি কোথায় ছিল? আজ যা হল তা খুবই খারাপ। নিন্দার কোনও ভাষা নেই।’’ অন্য দিকে, বিজেপি-র বন্‌ধ ডাকার যুক্তিকে সমর্থন করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ বলেন, ‘‘বিজেপি একটা রাজনৈতিক দল। তারা বন্‌ধ ডাকতেই পারে। যে কারণে বন্‌ধ ডেকেছে, তার মধ্যে অযৌক্তিক কিছু নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন