নীল বাতির গাড়িতেই বিধানসভায় পরিষদীয় সচিব ফিরদৌসি বেগম। মঙ্গলবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
রায় ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পরেও তার প্রতিলিপি হাতে পায়নি রাজ্য সরকার। তাই রাজ্যের ২৩ জন পরিষদীয় সচিব মঙ্গলবারও বহাল রইলেন নিজের নিজের পদে। বহাল রাখলেন নীলবাতির গাড়ি, সরকারি অফিস, ব্যক্তিগত সহকারী ও আর্দালিদের। নবান্ন সূত্রের খবর, হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি না আসায় সরকার এখনও পরিষদীয় সচিবদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দেয়নি। উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে সরকার কী করবে, এ দিনও তা নিয়ে সিদ্ধান্তও নেননি নবান্নের কর্তারা।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে কি না, সেই পরামর্শ নিতে এ দিন আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করেন। সূত্রের খবর, রায়ের প্রতিলিপি হাতে পাওয়ার পরে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে বলে আইনমন্ত্রীকে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিধানসভায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। আইনমন্ত্রীও ছিলেন সেখানে। হাইকোর্টের রায়ের পরে এখন সরকারের কী করণীয়— তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে বিধানসভা সূত্রের খবর। যদিও কল্যাণবাবুর দাবি, তিনি ব্যক্তিগত কারণে পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। হাইকোর্টের রায় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি। এ ব্যাপারে কোনও বৈঠক হয়নি বলে দাবি করেছেন চন্দ্রিমাদেবীও। পার্থবাবু পরে তৃণমূল ভবনে বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবং আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।’’
যে জনস্বার্থ মামলায় এই রায়, তার আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, রাজ্য সরকার যাতে শীর্ষ আদালতে গিয়ে একতরফা স্থগিতাদেশ না পায়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ করা হবে। তাতে দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরেই এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে শীর্ষ আদালত।
হাইকোর্টে তাঁদের পদের বৈধতা খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে কী ভাবছেন পরিষদীয় সচিবরা?
রাজ্য সরকারের তরফে কোনও নির্দেশ না আসায় অধিকাংশ পরিষদীয় সচিব মনে করেন, পদত্যাগ না করে তাঁরা অন্যায় কিছু করছেন না। অনেকেই জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁরা পরিষদীয় সচিব হয়েছেন। তাই তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ না এলে তাঁরা পদ ছাড়বেন না। এবং এই নীতি মেনে এ দিন যাঁরা বিধানসভায় এসেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই অন্যান্য দিনের মতো এসেছেন নীলবাতি লাগানো গাড়িতে।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, শিক্ষা দফতরের পরিষদীয় সচিব পুলক রায় বা পরিষদীয় বিষয়ক সচিব তাপস রায় সরকারের বরাদ্দ গাড়ি ব্যবহার করলেও তাতে বাতি লাগান না। এ দিন বিধানসভার অধিবেশন শেষে পুলকবাবু বলেন, ‘‘পরিষদীয় সচিব হয়েও কোনও দিন নীল বা লাল— কোনও বাতিই ব্যবহার করিনি। পাইলট কার বা নিরাপত্তা রক্ষী, আর্দালি কিছুই নেই আমার।’’ বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর ঘরেই তিনি বসেন বলে জানান। তাপসবাবুর জন্য নব মহাকরণে আলাদা ঘর বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু সেই ঘরে কোনও দিনই তিনি পা দেননি বলে দাবি তাপসবাবুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধানসভায় আমার আলাদা ঘর রয়েছে। এখানেই কাজ করি। আমার কোনও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট (ইএ) ও আর্দালি নেই। নীল বাতির গাড়িও ব্যবহার করিনি কোনও দিন।’’
গ্রামোন্নয়ন দফতরের পরিষদীয় সচিব ফিরোজা বিবি যথারীতি নীলবাতির গাড়িতেই বিধানসভায় এসেছিলেন। দফতরে যাবেন কি না, প্রশ্ন করলে জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত দফতরের দুই পরিষদীয় সচিব এ টি এম আব্দুল্লা এবং ফিরদৌসি বেগম সরকারি নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নীলবাতি লাগানো গাড়িই ব্যবহার করবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এবং এই কারণে সরকারের দেওয়া প্রতিমন্ত্রীর সমান মর্যাদার পদাধিকারী হিসেবে সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিতেও তাঁদের আপত্তি নেই। পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সেচ দফতরের শঙ্কর দলুই বা অনগ্রসর দফতরের সন্ধ্যা টুডু বরং পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘‘কেন নীলবাতি ব্যবহার করব না? কেনই বা দফতরে যাব না?’’