দৃশ্য-১: ক্লাস টেনে পড়া বছর ১৬-র কিশোরীটি কাঁদতে কাঁদতে এসে হাজির কালীঘাটে। রাস্তায় একে ওকে জিজ্ঞাসা করে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানাটা জেনেছে একটু আগেই। নিরাপত্তারক্ষীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে কান্না থামলেও কথা থামল না। এতটুকু না ঘাবড়ে বলে গেল নিজের সমস্যা। অভিযোগ, তার বাবা সৌদি আরবে কাজ করেন। তিন বছর অন্তর তিনি বাড়ি আসেন। এ বারে এসেই তিনি মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা শুরু করেছেন। পড়াশোনা ছেড়ে এখনই বিয়ে করতে চায় না মেয়েটি। কিন্তু বাবা, মা এমনকী আত্মীয়েরাও কেউ তার কথা শুনতে নারাজ।
খবর গেল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অফিস ঘরে।
দৃশ্য-২: হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সামনে দাঁড়িয়ে ১৪ বছরের ছেলেটি তখন নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে গড়গড়িয়ে বলছে নিজের ‘দুঃখের কথা’। মন দিয়ে পড়াশুনা না করায় বাবা-মা মারধর করে। তাই মুখ্যমন্ত্রী কোনও একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেই তার সমস্যা মিটে যাবে, সে ভাল ভাবে থাকতে পারে।
খবর গেল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অফিস ঘরে।
সোমবার বিকেলে কাকতালীয় ভাবে একই সময়ে নিজেদের সমস্যার সমাধান চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের কান্দির এক কিশোরী এবং আলিপুরদুয়ারের এক কিশোর। তাদের সমস্যার কথা জেনে বাড়ির অফিস থেকে ফোন যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি তখন নবান্নে। সেখানে বসে সব শুনে মমতা ফোন করেন মহিলা, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজাকে। তাঁকে নির্দেশ দেন, ওই কিশোরী ও কিশোরের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য। পরে শশী পাঁজার নির্দেশ মতো কালীঘাট থানা দু’জনকেই চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেয়। দু’জনকেই আপাতত হোমে পাঠানো হয়েছে।
ক’দিন আগেই ডায়মন্ড হারবারে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক অটো চালককে ভর্তি না নিয়ে ফেরত পাঠিয়েছিল একাধিক সরকারি হাসপাতাল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে সটান মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হাজির হন তাঁর সঙ্গী। সে বারও সব শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে ফোন করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যে এসএসকেএম বেড নেই বলে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল কিছু ক্ষণ আগেই, তাঁরাই তখন তড়িঘড়ি মহা যত্নে ভর্তি নেয় ওই রোগীকে!