বন্‌ধে মিশ্র সাড়া, ভোগান্তি ডুয়ার্সে

ডানকান গোষ্ঠীর চা বাগানগুলিতে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, পিএফ, রেশন দেওয়ার দাবিতে ডাকা ১২ ঘন্টার ডুয়ার্স তরাই বন্‌ধে দুর্ভোগের মুখে পড়লেন বাসিন্দারা। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুদ্ধ জন বারলা গোষ্ঠী এ দিনের বন্‌ধ ডেকেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৭
Share:

ডুয়ার্সের চামুর্চিতে সামসি ভুটান গেট বন্ধ। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ডানকান গোষ্ঠীর চা বাগানগুলিতে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, পিএফ, রেশন দেওয়ার দাবিতে ডাকা ১২ ঘন্টার ডুয়ার্স তরাই বন্‌ধে দুর্ভোগের মুখে পড়লেন বাসিন্দারা। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুদ্ধ জন বারলা গোষ্ঠী এ দিনের বন্‌ধ ডেকেছিল। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনও বন্‌ধকে সমর্থন জানায়। বন্‌ধের জেরে বেসরকারি বাস পথে না নামায় ভোগান্তি চরমে ওঠে নিত্যযাত্রীদের।

Advertisement

এ দিনও উত্তরবঙ্গে বেশ গরম ছিল। তার উপরে বাস না মেলায় সরকারি বাসেই ঠাসাঠাসি অবস্থায় যাতায়াত করতে বাধ্য হন নিত্যযাত্রীরা। তবে ডুয়ার্সের বিভিন্ন জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বন্‌ধের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। ডুয়ার্সের মেটেলি এবং নাগরাকাটায় দোকান বাজার বন্ধ ছিল। তবে মালবাজার, ওদলাবাড়ি, ডামডিম সর্বত্রই দোকান বাজার খোলা ছিল। বন্‌ধের প্রভাব দেখা যায়নি এলাকার চা বাগানগুলিতেও। বন্‌ধ সমর্থনকারীরা কাজে যোগ না দিলেও, অন্য শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা কাজে যাওয়ায় বাগানে স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। নাগরাকাটা এবং মেটেলি ব্লকের কয়েকটি চা বাগানে অবশ্য এ দিন কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। এ দিনের বন্‌ধকে সফল বলে দাবি করেছেন জন বার্লা। তাঁর দাবি, ডুয়ার্সের বাসিন্দারা বন্‌ধে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন।

বন্‌ধে বিন্নাগুড়ি, বানারহাট, চামুর্চিতে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। রাস্তায় সরকারি বেসরকারি বাস চলাচল না করায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। বানারহাট এলাকায় অনেক চা বাগান কাজ হলেও বীরপাড়ার চিত্রটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। বীরপাড়া এলাকার বেশির ভাগ চা বাগানের শ্রমিকরা এ দিন কাজে যোগ দেননি। বীরপাড়াতেও দোকান-বাজার, দু’একটি স্কুল কিছুক্ষণের খোলা থাকলেও বেশির ভাগ স্কুল বন্ধ ছিল।

Advertisement

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ডানকান সংস্থার উত্তরবঙ্গের ১৬টি চা বাগানে একযোগে অচলাবস্থা শুরু হয়। মালিকপক্ষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এই কারণ দেখিয়ে শ্রমিক মজুরি পিছিয়ে দেওয়া হতে থাকে। বকেয়া পিএফ, গ্র্যাচুইটি, রেশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সঙ্কট তৈরি হয় বাগানে। ডিমডিমা, হান্টাপাড়া, বীরপাড়া, লংকাপাড়া, নাগেশ্বরী, বাগরাকোটের মতো চা বাগানগুলির শ্রমিকরা বাগানে কাজে যোগ দিলেও একই সঙ্গে অন্য চা বাগানে অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংস্থার বেশ কিছু বাগান থেকে ম্যানেজারেরা বাগান ছাড়ায় সমস্যা আরও বাড়ে।

সমস্যা কাটাতে রাজ্য শ্রম দফতরের উদ্যোগে গত রবিবার কলকাতায় শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে বৈঠকে মালিক পক্ষের তরফ থেকে ডানকান সংস্থার কর্ণধার জিপি গোয়েঙ্কা উপস্থিত ছিলেন। জন বারলা ছাড়াও অন্য শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাগান খোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে একটি চুক্তিপত্রও সই হয়। সই করেছিলেন জন বারলাও। যদিও, বকেয়া না মেটালে বাগান স্বাভাবিক হতে দেওয়া যাবে না বলে বেঁকে বসেন জন। এই আপত্তির জেরেই বন্‌ধের ডাক দেন জন বারলা গোষ্ঠী। ডুয়ার্সের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জন বারলা নিজে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও সংগঠনের নিচু তলায় অনেক নেতাই চুক্তিকে ভাল চোখে নেননি। সংগঠনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এড়াতেই বন্‌ধের ডাক বলে তাঁদের দাবি। এ দিনের বন্‌ধের কোনই যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলি। এনইউপিডব্লুর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মণিকুমার ডারনালের কথায়, ‘‘আমরা বন্‌ধ রাজনীতির বিরুদ্ধে, প্রতিবাদের অনেক পথ রয়েছে। সে ভাবেও দাবি আদায় করা যায়।’’ সিটুর জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি জিয়াউল আলম এই বন্‌ধকে দিশাহীন বলেই দাবি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন