গার্ডদের বিক্ষোভে দুর্ভোগ হাওড়ায়

শনিবার হলেও সকালের ব্যস্ত সময়ে বর্ধমান শাখায় প্রচুর ভি়ড় থাকে। ট্রেন বাতিল হওয়ায় কার্যত উপচে পরা ভি়ড় হয় ট্রেনগুলিতে। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েও ট্রেনে চড়া ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বক্তব্য, রেলের অন্দরের গোলমালে আমজনতা কেন হয়রানির শিকার হবে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

গার্ডদের কর্মবিরতির জেরে শনিবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ব্যাহত হল পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান শাখার ট্রেন চলাচল। বাতিল করা হল ৩০টি লোকাল ট্রেন। ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত নাজেহাল হলেন কয়েক হাজার যাত্রী। গার্ডের ঘাটতি থাকায় কয়েকটি ট্রেনে সহকারী স্টেশন মাস্টার ও ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টররা সেই দায়িত্ব পালন করেন। পরে রেলকর্তাদের হস্তক্ষেপে কর্মবিরতি ওঠে। পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

শনিবার হলেও সকালের ব্যস্ত সময়ে বর্ধমান শাখায় প্রচুর ভি়ড় থাকে। ট্রেন বাতিল হওয়ায় কার্যত উপচে পরা ভি়ড় হয় ট্রেনগুলিতে। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েও ট্রেনে চড়া ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বক্তব্য, রেলের অন্দরের গোলমালে আমজনতা কেন হয়রানির শিকার হবে?রেল সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে হাওড়া শাখার সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেশনস ম্যানেজারের একটি চিঠিকে ঘিরে। ওই চিঠিতে সব ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টর ও স্টেশন ম্যানেজারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, রাত ১২টার পর থেকে কোনও ট্রেনে আর ‘গার্ড বক্স’ তোলা হবে না।

এই নির্দেশ নিয়েই গার্ডদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়া গার্ড কাউন্সিলের’ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ভোর থেকেই শুরু হয় কর্মবিরতি। বিভিন্ন লোকাল ট্রেনে গার্ডরা না উঠে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনে গার্ড বক্স রাখার জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। বস্তুত, গার্ড বক্স তুলে দেওয়ার নির্দেশ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি হাওড়ার স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন লোকাল, মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের এক দল গার্ড। তবে সে দিন কর্মবিরতি হয়নি।

Advertisement

গার্ডদের অভিযোগ, গার্ড বক্সে যাত্রী সুরক্ষার সরঞ্জাম থাকে। এটা না থাকলে যাত্রী সুরক্ষা বলে কিছু থাকবে না। অল ইন্ডিয়া গার্ড কাউন্সিলের সম্পাদক প্রবীর সাহা বলেন, ‘‘রেল চাইছে এই বক্স তুলে দিয়ে গার্ড কামরার দেওয়ালে আটকানো একটা ছোট্ট বাক্স রাখতে। কিন্তু ওই ছোট বাক্সে সব সরঞ্জাম রাখা যাবে না। সে ক্ষেত্রে যাত্রী সুরক্ষার সঙ্গে আপস করতে হবে।’’ প্রবীরবাবু বক্তব্য, রেলের জেনারেল রুলে গার্ড বক্সের কথা বলা আছে। সেই রুল সহজে পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই আইনের তোয়াক্কা করছেন না। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত সকাল ৯টা নাগাদ হাওড়ার অতিরিক্ত ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের ঘরে বিক্ষোভকারী গার্ডদের ডেকে পাঠানো হয়। বৈঠকের পর রেলের তরফে জানানো হয়, গার্ড বক্স নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে না পৌঁছে ফের আগামী মঙ্গলবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। আপাতত ট্রেনে গার্ড বক্স থাকবে। এর পরেই কর্মবিরতি তুলে নেন বিক্ষুব্ধ গার্ডেরা।

রেলকর্তাদের একাংশের দাবি, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে গার্ড বক্সের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সিগন্যালের আলো দেখায় ডিজিটাল টর্চ। ‘রুল বুক’ পড়া যায় মোবাইল ফোনেই। সব স্টেশনে দোকান থাকায় খাবার সঙ্গে নেওয়ার দরকার নেই। সর্বোপরি রেলের সাম্প্রতিক সম্মেলনে গার্ড পদই তুলে দেওয়ার কথা উঠেছে। ফলে গার্ড বক্সের যৌক্তিকতা কী, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ইতিমধ্যে শিয়ালদহ ডিভিশনে লোকাল ট্রেনে এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বক্স বহন খাতে কয়েক কোটি টাকা বাঁচিয়েছে রেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন