কলেজে কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ কায়েম করার দায়িত্ব অধ্যক্ষদেরই নিতে হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন। আর মঙ্গলবারেই দলের শহিদ দিবসের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, শিক্ষক-অধ্যক্ষদের সম্মান দিতে হবে। কিন্তু দলের কর্মী-সমর্থকেরাই যে তাঁদের নির্দেশ কানে তুলছে না, বৃহস্পতিবার আবার এক অধ্যক্ষের ঘেরাওয়ে তার প্রমাণ মিলল। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার কাছেই, মধ্যমগ্রাম কলেজে।
কর্মসংস্কৃতির হাল ধরতে গিয়ে এ দিন শাসক দলের ছাত্র-সমর্থকদের রোষের মুখে পড়তে হয় মধ্যমগ্রামের বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষকে। কলেজ সূত্রের খবর, ক্লাস শেষ না-করে সময়ের আগেই বেরিয়ে আসায় এক শিক্ষিকাকে ফের ক্লাসে যেতে বলেন অধ্যক্ষ চন্দন চক্রবর্তী। এই নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। অধ্যক্ষের আচরণে ঝিলম পপ্তানি নামে ওই শিক্ষিকার অসম্মান হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বেলা ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখেন ছাত্র সংসদের নেতারা। বলাবাহুল্য তাঁদের সকলেই শাসক দলের ছাত্র শাখা টিএমসিপি-র সদস্য। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বিধায়ক তথা মধ্যমগ্রাম পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান রথীন ঘোষের হস্তক্ষেপে বেশি রাতে ঘেরাও উঠে যায়।
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করেই জেলায় জেলায় শিক্ষকদের মারধর করা হচ্ছে। শিক্ষা শিবিরের ক্ষোভ, দলের ছাত্র-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রীও। মহানগরের অদূরে এ দিন ওই অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে টিএমসিপি বুঝিয়ে দিল, যে যা-ই বলুক, তারা চলবে নিজেদের মতো করেই।
কী হয়েছিল এ দিন?
কলেজ সূত্রের খবর, এ দিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের প্রথম ক্লাস ছিল। কিন্তু ওই শিক্ষিকা নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান বলে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা। চন্দনবাবু ওই শিক্ষিকাকে ফের ক্লাসে যেতে বলেন। ওই শিক্ষিকা ফের ক্লাসে গিয়েছেন কি না, তা দেখতে অধ্যক্ষও প্রথম বর্ষের ওই ক্লাসে যান। অধ্যক্ষের অভিযোগ, তিনি ক্লাসে গিয়ে শুনতে পান, তাঁর কাছে অভিযোগ করার জন্য পড়ুয়াদের বকাবকি করছেন ঝিলমদেবী। অধ্যক্ষ সঙ্গে সঙ্গেই ওই শিক্ষিকাকে থামতে বলেন। ক্লাস চালানোর নির্দেশ দেন। তার পরে তিনি নিজের ঘরে ফিরে যান। কিছু পরেই ছাত্র সংসদের এক দল কর্মী চন্দনবাবুর ঘরের বাইরে অবস্থানে বসে পড়েন। প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে রথীনবাবুর হস্তক্ষেপে ঘেরাও ওঠে।
শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা স্বয়ং শিক্ষকদের সম্মান করার বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর দলের ছাত্রনেতারা নিগ্রহ-ঘেরাও সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন কী ভাবে? তা হলে কি খোদ মমতার নির্দেশকেই বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাচ্ছেন দলের কর্মীরা?