jalpaiguri

ফোন না-থাকলে পড়া হবে না? প্রশ্ন ছাত্রীর

তার জন্মের আগে বাবা ছেড়ে চলে যান। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে বরুয়া পাড়ায় মামাবাড়িতেই মানুষ হচ্ছে সে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৬:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

অনলাইন ক্লাস নিচ্ছিলেন মাস্টারমশাই। হঠাৎই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল প্রশ্ন: ‘স্যর, আমার বাবা নেই। মা কিছু করতে পারে না। মোবাইল ধার করে পড়ছি। আমার মতো যাদের অবস্থা, তারা কী করে ক্লাস করবে স্যর?’

Advertisement

দু’দিন পেরিয়ে গিয়েছে। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী, সাগরিকা রায়ের প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাননি দু’দশক ধরে শিক্ষকতা করা মানুষটি।

জলপাইগুড়ি পূর্বাঞ্চল হাইস্কুলে পড়ে সাগরিকা। তার জন্মের আগে বাবা ছেড়ে চলে যান। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে বরুয়া পাড়ায় মামাবাড়িতেই মানুষ হচ্ছে সে। মা লজ্জা রায়ের শরীর ভাল নয়। ধান বোনা, পাট কাটা বা আলু তোলার মরসুমে তিনি মাঝে মাঝে দৈনিক মজুরিতে কাজ পান। কিন্তু তাতে সংসারই চলে না তো মোবাইল ফোন কেনা! শেষে পাড়ার এক দিদির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তার নম্বর দিয়েছে স্কুলে। সেই মোবাইলেই ক্লাস করে।

Advertisement

‘‘আমার পড়তে খুব ভাল লাগে। টাকা নেই বলে প্রাইভেটে পড়তে পারি না। তাই অঙ্কের নম্বরটা প্রতি বছর কম হয়। কিন্তু আমি নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উঠতে ইংরেজিতে ৯৪ পেয়েছি, বাংলায় ৬৫,’’ বলছিল সাগরিকা। তার পরেই তার প্রশ্ন, ‘‘আমার মায়ের কাছে টাকা নেই, তাই স্যরের কাছে জানতে চেয়েছি, আমি কি আর পড়াশোনা করতে পারব না?”

সাগরিকার মা জানালেন, তাঁর কোনও স্থায়ী রোজগার নেই। কখনও ‘মাঠে’ কাজ হলে তাঁর ডাক পড়ে। তবে শরীর ভাল নয় বলে ভারী কাজ করতে পারেন না। দারিদ্র্য সীমার নীচে বা বিপিএল তালিকায় তাঁদের নাম আছে কিনা, জানেন না তা-ও। তিনি বলেন, “মেয়েটা পড়তে চায়। যত উঁচু ক্লাসে উঠবে, ততই খরচ বাড়বে। সে খরচ তো আমি চালাতে পারব না।” যে পড়শি ‘দিদি’র মোবাইল নিয়ে সাগরিকা মাঝেমধ্যে অনলাইন ক্লাস করে, সেই দিদি, মৌসুমী রায় বলেন, “রোজগার তেমন নেই বলে সাগরিকার মা কতবার ওকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বলেছে। কিন্তু ওর খুব আগ্রহ।”

রোজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সাগরিকা পড়শি দিদির বাড়িতে যায় অনলাইন ক্লাস করতে। তার কথায়, “দিদি খুব ভাল। কিন্তু সবসময়ে কি দিদির থেকে মোবাইল চাওয়া যায়?’’ তার কথায়, মোবাইলে স্যরেরা যে নোট দেন, নিজের মোবাইল না থাকলে সেগুলি পড়ার সময়ে দেখা যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন