কলেজে ভর্তিতে বেনিয়ম রুখতে সম্প্রতি কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তাতে কোচবিহারের পরিস্থিতি বদলায়নি। শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব কলেজ চত্বর ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে আসে। বিকেল চারটে নাগাদ শহরের জনবহুল রাস্তায় গুলি করা হয় কোচবিহার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তথা টিএমসিপি-র কলেজ ছাত্র শাখার আহ্বায়ক মাজিদ আনসারিকে। পেটে গুলি লেগেছে তাঁর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে শিলিগুড়িতে রেফার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, কোচবিহার শহরে কলেজের দখলদারি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টিমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। একটি গোষ্ঠী যুব তৃণমূল নেতা অভিজিৎ দে ভৌমিকের। আর একটি তৃণমূল কাউন্সিলর শুভজিৎ কুণ্ডুর। শুভজিৎ এখন ফেরার। কোচবিহার কলেজে অভিজিতের গোষ্ঠী বেশি সক্রিয় বলে দাবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কয়েক জন কর্মী বাইরে থেকে কলেজের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে অভিজিতের লোকজন বাধা দেন। প্রথমে বচসা, তার পরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তাতে কয়েক জন চোটও পান। ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, তখনই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর প্রাক্তন ছাত্ররা কয়েক জন মাজিদ আনসারি-সহ বর্তমান ছাত্রদের হুমকি দেন। অভিজিতের ঘনিষ্ঠ টিএমসিপি-র কোচবিহার জেলা কার্যকরী সভাপতির অভিযোগ, ‘‘মাজিদের বাড়ি রেলগুমটি এলাকায়। কলেজ থেকে দল বেঁধে বাড়ি ফিরছিলেন মাজিদরা। স্টেশন মোড় থেকে রেলগুমটি যাওয়ার রাস্তায় তাঁদের পথ আটকে গুলি করা হয়।’’
তিনি বলেন, “কলেজে অনার্সে ভর্তি করানোর জন্য ওই বহিরাগত দুষ্কৃতীরা একটি তালিকা নিয়ে এসেছিল। তাদের ছক ছিল, টাকার বিনিময়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা। এখনকার পড়ুয়ারা বাধা দেন। এরই জেরে মাজিদকে গুলি করা হয়।” টিএমসিপি-র কোচবিহার জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরী বলেন, “আমি যত দূর শুনেছি পুরো ঘটনা কলেজের বাইরের। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বহিরাগতরা নিয়মিত কলেজের মধ্যে গিয়ে গণ্ডগোল তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ যেখানে মাজিদকে গুলি করা হয়েছে, সেখান থেকে রেল স্টেশন বা সার্কিট হাউস খুবই কাছে। শহরের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিকেল চারটের সময়ে একটি ছেলে গুলি খেল এবং তার পরে চেষ্টা করেও কাউকে পুলিশ ধরতে পারল না— এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশের তরফে জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে শুধু বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”