চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যথাযথ কি না অথবা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গেলে পড়ুয়ার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কি না— এগুলো যাচাই করার জন্য দেশ জুড়ে তৈরি হচ্ছে অনলাইন তথ্য ব্যাঙ্ক। সেই ব্যাঙ্কে যাতে যথাসময়ে যাবতীয় তথ্য জমা পড়ে, তার জন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই ব্যবস্থা নেওয়ার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি।
ওই অনলাইন তথ্য ব্যাঙ্কের পোশাকি নাম ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিক ডিপোজিটরি’ বা ন্যাড। কেন্দ্রীয় সরকার গত অক্টোবরে ন্যাড তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ইউজিসি সম্প্রতি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্র ও মার্কশিটের যাবতীয় তথ্য ন্যাডে জমা দিতে হবে, সেই বিষয়ে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যলয়গুলিতে ‘ন্যাড সেল’ তৈরি করতে হবে।
কেন্দ্র এই সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে চায় কেন?
শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, এ ভাবে তথ্য সংরক্ষণের বহুমুখী উদ্দেশ্য আছে। l তথ্য জানতে চাইলে অনলাইনে ২৪ ঘণ্টাই তা জানা যাবে। পৃথক পৃথক তথ্য জানতে আলাদা আলাদা জায়গায় দৌড়তে হবে না। l পড়ুয়াদের মার্কশিট বা শংসাপত্র খোয়া গেলে ন্যাড থেকেই চটজলদি তার প্রতিলিপি পাওয়া যাবে। বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে দরবার করতে হবে না। l নিয়োগকর্তারা কর্মপ্রার্থীর যোগ্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে চাইলে সরাসরি ন্যাডে আবেদন করতে পারবেন। l একই ভাবে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক অথবা ভিসা বিষয়ক অনুসন্ধানের জন্য যে-কোনও সংস্থাই ন্যাডের দ্বারস্থ হতে পারে। তবে যাঁর শংসাপত্র বা মার্কশিটের খোঁজ নেওয়া হবে, এই বিষয়ে তাঁর অনুমতি লাগবে।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এখন নতুন শংসাপত্র অথবা মার্কশিট পেতে অথবা এই বিষয়ে জানতে অনেকটা সময় লাগে। ন্যাড পুরোপুরি কার্যকর হলে সেটা লাগবে না। একই জায়গায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। পড়ুয়া বা কর্মপ্রার্থী অথবা ভিসার জন্য আবেদনকারীদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার দরকার পড়বে না।
ন্যাডে তথ্য জমা দেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কী ভাবছে?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন বৃহস্পতিবার জানান, এখনও তাঁদের কাছে এই বিষয়ে ইউজিসি-র নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি। এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘‘ইউজিসি-র নির্দেশ অনুযায়ী যা যা করণীয়, সবই করা হবে,’’ বলেন বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরী।
ন্যাড সেল তৈরি এবং তাতে ঠিক সময়ে তথ্য জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য পুরো ব্যাপারটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের অনেকে। এখন কেন্দ্রীয় পরিদর্শকদের দিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো এবং কাজকর্ম যাচাই করিয়ে র্যাঙ্ক বা গ্রেড দেওয়া হয়। ন্যাডে পড়ুয়াদের মার্কশিট ও শংসাপত্রের তথ্য ঠিক সময়ে জমা দেওয়া হচ্ছে কি না, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেড নির্ধারণের সময় সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হবে। তাই ঠিক সময়ে তথ্য জমা দিতে বাধ্য হবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ই।