লাঞ্ছিত শিক্ষকের অস্বস্তি বাড়িয়ে দাপট গৌরবদের

সেই গৌরব কিন্তু বহাল তবিয়তেই ঘোরাফেরা করছেন কলেজ স্ট্রিট, রাজাবাজার-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

শাসানি: হুমকির সেই ফুটেজ। —ফাইল চিত্র।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ভাস্কর দাসকে চড় মারায় এবং কুকথা বলায় শাস্তি হয়েছিল টিএমসিপি নেতা গৌরব দত্ত মুস্তাফির। সেই গৌরব কিন্তু বহাল তবিয়তেই ঘোরাফেরা করছেন কলেজ স্ট্রিট, রাজাবাজার-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে।

Advertisement

শিক্ষক-নিগ্রহের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, গৌরব ২০২০ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কোনও বিভাগেই ভর্তি হতে পারবেন না। কিন্তু গৌরব ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল না।

শাস্তি ঘোষণার পরেও গৌরব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানোয় শিক্ষক ভাস্করবাবুর যে খুবই অস্বস্তি হয়, সেটা তাঁর কথায় স্পষ্ট। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘গৌরব ইচ্ছেমতো ক্যাম্পাসে ঢুকছে। চোখের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তা হলে ওর আর শাস্তিটা কী হল?’’ এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কেউ নেই।

Advertisement

আরও খবর: সিবিআই জালে নারদ মামলার আইনজীবী

ভাস্করবাবুকে গৌরবের চড় মারার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। ভাস্করবাবু চেয়েছিলেন, গৌরবকে যেন অন্তত দু’বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া না-হয়। কর্তৃপক্ষ যে সেই ব্যবস্থা করতে পারেননি, ভাস্করবাবুর বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি-সমর্থকেরাও জানান, গৌরব পুরনো দাপটেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সচিব অমিত রায় বলেন, ‘‘গৌরব ক্যাম্পাসে ঢোকে কি না, জানি না। গৌরব ক্যাম্পাসে ঢুকবে না, এমন কোনও বিধিনিষেধও তো আরোপ করা হয়নি।’’

এর আগে, ২০১৫ সালে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক অমিত রায় টিএমসিপি নেতা হেমন্তকুমার দাসের হাতে নিগৃহীত হন। কোনও শাস্তি হয়নি হেমন্তকুমারের। অমিতবাবু সোমবার জানান, হেমন্তকুমার সেই সময় ছিলেন কলেজের পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্র। কলেজ-কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। দলও কোনও শাস্তি দেয়নি ওই টিএমসিপি নেতাকে।

শুধু ভাস্করবাবু, অমিতবাবুর নিগ্রহকারীরাই যে বুক ফুলিয়ে ঘোরাফেরা করছেন, তা নয়। শিক্ষক-নিগ্রহের বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা সারা রাজ্যেই বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ বাম নেতৃত্বাধীন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওয়েবকুটা-র। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ জানান, তৃণমূল জমানায় শিক্ষক-নিগ্রহের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। তার প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই দোষীদের শাস্তি হয়নি। তার মূল কারণ দোষীরা শাসক দলের কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘২০১২ সাল থেকে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষক-নিগ্রহের যে-সব ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার প্রায় কিছুই হয়নি। আসলে যারা এগুলো করে, তারাই শাসক দলের ভরসা। তাদের উপরে নেতৃত্বের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই।’’ ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক সৌরভ ঘোষ মনে করেন, তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনে নীতি-আদর্শের চর্চা হওয়া দরকার। ‘‘শিক্ষকদের আলাদা সম্মান দেখানোর কোনও ব্যাপারই নেই ওদের মধ্যে। গোটাটাই দখলদারির রাজনীতি,’’ বলছেন সৌরভ।

এই বিষয়ে টিএমসিপি নেত্রী জয়া দত্তের বক্তব্য, তাঁদের সংগঠনের কেউ এমন ঘটনা ঘটালে সে যাতে ক্যাম্পাসে না-ঢোকে, সেই বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেওয়া থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। এটা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন জয়া। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন