সময় বাড়ানোয় ছাত্রেরা আশায়, অধ্যক্ষেরা চাপে

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে পরীক্ষা ফর্ম পূরণের সময়সীমা বাড়ানোয় পড়ুয়ারা আশান্বিত। কিন্তু অনেক কলেজের কর্তৃপক্ষই বেশ চাপের মুখে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

সমস্যার সুরাহা কত দূর হবে, সন্দেহ আছে। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে পরীক্ষা ফর্ম পূরণের সময়সীমা বাড়ানোয় পড়ুয়ারা আশান্বিত। কিন্তু অনেক কলেজের কর্তৃপক্ষই বেশ চাপের মুখে।

Advertisement

ন্যূনতম হাজিরা যাঁদের নেই, সেই পড়ুয়াদের আশা, সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে তাঁরাও ফর্ম পূরণের সুযোগ পাবেন। কিন্তু কিছু কলেজ-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এর ফলে তাঁদের উপরে চাপ বাড়বে। এবং সেই চাপটা আসবে অনুরোধ-উপরোধ আর বিক্ষোভ-হাঙ্গামার আকারে। শুক্রবারেই কোনও কোনও কলেজে ছোটখাটো গোলমাল হয়েছে। শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, কোনও ভাবে পরিস্থিতি সামলানো গিয়েছিল। কিন্তু ফর্ম পূরণের দিন বৃদ্ধির ফলে ফের চাপ আসছে। সরকারি ভাবে অবশ্য কেউই এটা মানতে রাজি নন। আর গোটা বিষয়টিকেই ‘কনফিডেন্সিয়াল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মধ্য কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ।

চলতি শিক্ষাবর্ষে সিবিসিএস চালু হওয়ার পরে পরীক্ষায় বসতে হলে স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের ৬০ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হাজিরার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১০ নম্বর। ন্যূনতম হাজিরা না-থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে কলেজে কলেজে বিক্ষোভ হচ্ছে। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে আশা-আশঙ্কার দোলাচল শুরু হয়েছে। ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের ফর্ম পূরণের সময়সীমা শেষ হলেও একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে ৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ফর্ম পূরণ করা যাবে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, বাণিজ্য শাখায় আজ, শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ফর্ম পূরণ করা যাবে অনলাইনে।

Advertisement

তার পরেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে শুক্রবার মহেশতলা কলেজে বিক্ষোভ দেখান জনা ৭০ পড়ুয়া। বিক্ষুব্ধদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় সময় বাড়িয়েছে তাঁদের নাম পরীক্ষার তালিকায় তোলার জন্য। তাঁদের সুযোগ দেওয়া হোক। অধ্যক্ষা রুম্পা দাস অবশ্য বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের জানিয়ে দিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।’’

অধ্যক্ষেরা জানাচ্ছেন, তেমন কথা বিশ্ববিদ্যালয় বলেওনি। তাই বাড়তি সময় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম থেকেই কলেজ-কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ রয়েছে। ফর্ম পূরণের সময় বাড়িয়ে তাঁদের ফের চাপে ফেলা হল।

‘‘প্রকাশ্যে নয়, গোপনে চাপ আসছে। পড়ুয়ারা এসে হাতে-পায়ে ধরছে। তাদের বসতে দিলে তো ১০ নম্বরও দিতে হয়। তা করা যায় না,’’ বলেন মধ্য কলকাতার অন্য একটি কলেজের অধ্যক্ষ। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবাশিস মণ্ডলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পুরো কথা না-শুনেই তিনি বলেন, ‘‘এটা ‘কনফিডেন্সিয়াল।’ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ ফোন কেটে দেন তিনি। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, বাড়তি সময় যে চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে, দ্রুত এড়িয়ে যাওয়ার এই প্রচেষ্টা থেকেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা অবশ্য জানান, কলেজের সুবিধার জন্যই ফর্ম পূরণের জন্য বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে।

তবে হেরম্বচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষা নবনীতা চক্রবর্তীর দাবি, তাঁর উপরে কোনও চাপ নেই। তিনি বলেন, ‘‘দিন বাড়ানোর কথা শুনে বেশ কয়েক জন পড়ুয়া এসে খোঁজ নিচ্ছে, নিয়ম শিথিল হয়েছে কি না। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিয়ম শিথিল হয়নি।’’ অধ্যক্ষ সাসপেন্ড থাকায় চারুচন্দ্র কলেজ ফর্ম পূরণের টাকা পাঠাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়তি সময় পেয়ে তাঁদের সুবিধা হয়েছে বলে জানান সেখানকার শিক্ষকেরা। ‘‘বাড়তি সময় পেয়ে সুবিধাই হয়েছে। সমস্যা তো তেমন কিছু

ছিল না,’’ বললেন পরিচালন সমিতির সভাপতি শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন