দূষণ-দানবের হাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতেই বিকল্প শক্তি চাই। সেই শক্তি উৎপাদন আর তার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমজনতার সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা বারবার বলছেন বিজ্ঞানীরা। সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন এবং সেই বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে এ বার তাই সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে চাইছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনার্জি স্টাডিজ।
কয়েক দশক ধরে সৌর শক্তি উৎপাদন এবং তার ব্যবহার নিয়ে গবেষণার কাজ করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সৌর শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করা এবং সেই কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, এই রাজ্যের বাইরেও পরামর্শ দিচ্ছেন স্কুল অব এনার্জি স্টাডিজের বিজ্ঞানীরা। এ বার সাধারণের জন্য দরজা খুলে চলেছেন তাঁরা। এনার্জি স্টাডিজের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ সোমবার জানান, সর্বসাধারণের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী-সহ যে-কোনও পেশার মানুষ সেই প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে পারবেন। ‘‘সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আগেই এই ব্যাপারে প্রস্তাব এসেছিল। আমরা তাই সর্বসাধারণের জন্যই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি,’’ বলেন বিশ্বজিৎবাবু।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগও সৌর শক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। সৌর শক্তিকে আরও সুলভে ব্যবহারের উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নাল ‘দ্য জার্নাল অব ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি লেটার্স’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে দাবি করেছেন যাদবপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের চার গবেষক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের এক বিজ্ঞানী। ওই নিবন্ধে পাঁচ পদার্থবিদের দাবি, সিলিকনের বদলে সৌর কোষ উৎপাদনে তুলনায় কম দামি পেরোভস্কাইট কী ভাবে আরও সক্রিয় ভাবে ব্যবহার করা যায়, সেই পদ্ধতি তাঁরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। এর ফলে সাধারণ মানুষ অনেক সস্তায় সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।
এই গবেষণা হয়েছে যাদবপুরের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক পার্থপ্রতিম রায়ের তত্ত্বাবধানে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়দীপ ধর, সায়ন্তন শীল ও অর্ক দে এবং ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের ডীর্থ সান্যাল।
কেন্দ্রের সৌর বিদ্যুৎ বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা শক্তিপদ গণচৌধুরী জানান, সিলিকনের দাম কমেছে। কিন্তু সিলিকনকে ব্যবহারযোগ্য করতে হলে বিদ্যুৎ লাগে। তার খরচ আছে। কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে দূষণ হয়। তাই পৃথিবী জুড়ে সিলিকনের পরিবর্তে কী ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। পেরোভস্কাইট সেই গবেষণার ফসল। ‘‘তার ব্যবহারকে আরও ত্রুটিমুক্ত করতে পারলে তো ভালই,’’ বলছেন শক্তিপদবাবু।