পাখি উড়েছে!
ইডি তাঁকে সশরীরে দেখা করার নোটিস দিয়েছে। তিনি আসেননি। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করেও তাঁর হদিস পায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থাটি। টাওয়ার লোকেশন দেখাচ্ছে সল্টলেক। ইডি-র তদন্তকারীদের ধারণা, নতুন নম্বর ব্যবহার করছেন তিনি। সল্টলেকের বাড়ি গিয়ে কারও দেখা মিলছে না। তিনি যে সব সংস্থার সদস্য, তাদের লোকেরাও তাঁর খোঁজ পাচ্ছেন না। শুধু লেটার বক্সে ফেলে দেওয়া হচ্ছে চিঠি।
সূত্রের খবর, তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছে দিল্লি বিমানবন্দরের সামনে। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায়। বিমানবন্দরের অ্যারাইভালের বাইরে কানে ফোন নিয়ে কথা বলছিলেন কারও সঙ্গে।
শেষ পর্যন্ত বোধ হয় কলকাতা ছেড়ে পালিয়েই গেলেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন!
মঙ্গলবার দিল্লি বিমানবন্দরের অ্যারাইভালে যে নাট্যকর্মী শিল্পীকে দেখেছিলেন তিনি ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে, সাদা দাড়িওয়ালা বেঁটে-খাটো মানুষটি শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য ছাড়া আর কেউ নন। অন্য একটি সূত্র আবার জানাচ্ছে, দাড়িগোঁফ সব কামিয়ে শিল্পী কিসানগঞ্জ হয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন নেপালে।
সোমবার তাঁর হাজির হওয়ার কথা ছিল ইডি-র দফতরে। ওই সোমবার থেকে যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছেন শুভাপ্রসন্ন। বাড়ির লোক দরজা খুলছেন না। দোতলার বারান্দায় দেখা যাচ্ছে না কাউকে। প্রতিবেশীরা বলছেন, তিন দিন আগে শেষ দেখেছেন তাঁকে। শিল্পীর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, তৃণমূল নেত্রী দূরে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন শিল্পী। লোকের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যে সব জায়গায় তাঁকে দেখা যেত, সেখানে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারপরেই হঠাৎ অন্তর্ধান।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে তাঁর বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করা হয়েছিল অন্তত সাত বার। কেউ ধরেনি। শেষমেশ রাত ৯টা নাগাদ এক জন ফোন ধরেন (কোনও পুরুষালি মহিলাকণ্ঠ বা মেয়েলি পুরুষকণ্ঠ)। বেশ কয়েক বার হ্যালো, হ্যালো করে তিনি “কী যে হয়েছে! কিছুই শোনা যাচ্ছে না” বলে ফোনটি রেখে দেন।
এই চিত্রশিল্পীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার জন্য আলোচনা শুরু করেছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। ইডির এক কর্তা জানান, নতুন করে সমন জারি করে ডাকা হবে না শুভাপ্রসন্নকে। এ বার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে শুভাপ্রসন্নর এই ‘অসহযোগিতা’-র কথা জানানো হবে। আরও কিছু দিন অপেক্ষা করা হবে। তার মধ্যে শুভাপ্রসন্ন সল্টলেকে ইডি-র অফিসে হাজিরা দিলে তো ভাল। নয় তো আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানানো হবে।
কিন্তু, তত দিনে ভারত ছেড়ে তিনি বিদেশে চলে গেলে কী হবে? গত বছর একটি রাজনৈতিক সভায় হাজির থাকবেন না বলে কলকাতা থেকে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, তাঁর বিদেশ যাওয়া আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় যে লুক-আউট নোটিস, এখনও তা জারি করা হয়নি। এই নোটিসটি তদন্তকারী সংস্থা পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। তার পর দেশের প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবং বন্দরে অভিবাসন অফিসারদের কাছে তা পাঠানো হয়।
সূত্রের খবর, এই নোটিস যদি শুভাপ্রসন্নের নামে জারি করা হয়, তা হলে তিনি কলকাতা বা দিল্লি কোনও শহর থেকেই বিদেশে যেতে পারবেন না। কিন্তু, এখনও সেই নোটিস জারি হয়নি। ফলে, এর মধ্যে তিনি বিদেশেও চলে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুভাপ্রসন্নের এই অন্তর্ধানে অবশ্য বিচলিত নন ইডি-র তদন্তকারীরা। তাঁদের এক জনের কথায়, “যাবেন কোথায়, আমরা সময় হলে ঠিক তুলে নেব।”