ফাইল চিত্র
শিক্ষা পোশাক বিধি নিয়ে মন্তব্য করে এ বার বিতর্কে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। রবিবার বালিগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সংস্কৃতি নিয়ে বলতে গিয়ে সুব্রতবাবুর মন্তব্য, ‘‘একটা রুমালে যতটুকু কাপড় থাকে, কেউ যদি ততটুকু কাপড় দিয়ে পোশাক বানিয়ে পরে, তবে তা অপসংস্কৃতি।’’
বামফ্রন্টের আমলে আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শুভঙ্কর চক্রবর্তী ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা নিয়ে সেই সময় কম বিতর্ক হয়নি। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন স্কুলে শাড়ি না সালোয়ার— এই প্রশ্নে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তবে এই প্রথম কোনও মন্ত্রীর নাম জড়াল পোশাক বিতর্কে। এ দিন সুব্রতবাবু বলেন, শাড়ি পরা বাধ্যতামূলক বলতে চান না তিনি। চুড়িদারেও না নেই তাঁর। তবে যে যা-ই পরবে, তাতে যেন কাপড়ের পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকে। সেটা বোঝাতে গিয়েই আসে রুমালের কথা। তিনি বলেন, ‘‘আমি আন্দোলনের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তা যেন সভ্যতা-ভব্যতা বজায় রেখে হয়। প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি উগ্র। এখন মনে হয়, ভাগ্যিস এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়িনি!’’
রাজ্যের মন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্যে আপত্তি উঠেছে। নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘রুমালের মাপের পোশাক কেউ পরেন না।’’ তাঁর মতে, ছাত্রী-নিগ্রহ বা যে কোনও আন্দোলন, প্রতিবাদে ছাত্রদের মতোই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সেটা এই সব নেতা সুনজরে দেখেন না।
যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’-র সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘শাড়ি পরা মহিলা, ধুতি-পাজামা-পাঞ্জাবি পরা লোকেরা কী করেন তা জানা আছে। শাড়ি পরলেই ভদ্র আর না হলে অভদ্র— এ কথা বলা যায় না। মন্ত্রী বরং এ সব না ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উন্নয়নে অর্থ-বরাদ্দের দিকে নজর দিন।’’ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকার কথায়, ‘‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়ছেন সকলেই প্রাপ্তবয়স্ক, সুতরাং তাঁদের পোশাক নির্বাচনের উপর আস্থা রাখা যায়।’’
সুব্রতবাবুর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরাও। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাশ তৃষা চন্দ বললেন, ‘‘এক জন নির্বাচিত জননেতা যখন ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন, তখন বোঝা যায় দেশের মেয়েরা কী অবস্থায় আছে,’’ বললেন তৃষা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী গীতশ্রী সরকার মন্ত্রীর বক্তব্যকে অসাংবিধানিক এবং অশালীন মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কে কী পরবে, সেটা তার নিজের বিষয়। সংবিধানে কোথাও বলা নেই, কে কী পোশাক পরবে!’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া উচিত— দিন কয়েক আগেই সুব্রতবাবুর এমন কথায়ও বিতর্ক তৈরি হয়। সেই প্রসঙ্গে রবিবার তিনি বললেন— ‘‘তিন বছরটা কোনও অঙ্কের হিসেবে বলিনি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি। এই মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া জরুরি। কত দিন, তা বলা যাবে না।’’
এই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুব্রতবাবুরা যে ভাবে শিক্ষাকে দেখেন, তার সঙ্গে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার ধারণা খাপ খাবে না, সেটাই স্বাভাবিক। ওঁর কথায় তো আরএসএস এবং খাপ পঞ্চায়েতের প্রতিধ্বনি! আসলে ওঁরা ছাত্রসমাজকে ভয় পান। তাই হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন বন্ধ করে দেন, অথবা প্রতিষ্ঠানটাই বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ এ নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ তৃণমূলের অনেক নেতাই। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা বলছেন, সুব্রতবাবু কোথায় কী মন্তব্য করছেন, তার দায় তাঁরা নেবেন না।