বিমর্ষ: অসুস্থ দুই নেতাকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
লোকসভায় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তাঁরা ন্যায়-বিচারের অপেক্ষা করছেন। সুদীপবাবুর মতো বর্ষীয়ান সাংসদকে অসু্স্থ অবস্থায় যে ভাবে চার মাস আটকে রাখা হয়েছে, সেই দশা থেকে তাঁরা মুক্তি চান।
মঙ্গলবার রাতে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে নেমেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি পৌঁছন অ্যাপোলো হাসপাতালে। যার চার তলায় ৪০৩ নম্বর সুইটে রয়েছেন সুদীপ আর ৪৩২ নম্বর কেবিনে রোজভ্যালি-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের অন্য সাংসদ তাপস পাল। দু’জনকেই দেখতে গিয়েছিলেন মমতা। তবে সুদীপবাবুকে ঘিরে মমতার আবেগ ছিল দৃশ্যতই বেশি। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সুদীপদা কখনও কোনও অন্যায় করেনি। লোকটাকে চার মাস ফেলে রাখা হয়েছে! শরীর ভাল নয়, ১৭-১৮ কেজি ওজন কমে গিয়েছে। আমাকে দেখে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন।’’ সুদীপবাবু মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বলেও এ দিন জানিয়েছেন মমতা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সুদীপবাবুর জামিন মঞ্জুরের জন্য এখন সর্বাত্মক চেষ্টা হবে। তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, সুদীপবাবুর মতো রাজনীতিক এমন অসুস্থ অবস্থায় কোনও ভাবেই ‘পালিয়ে’ যাবেন না! তাই তাঁর জামিন মঞ্জুর হলে তদন্তের কোনও ক্ষতি হবে না। সুদীপবাবুর অসুস্থতা এতটাই গুরুতর যে, কলকাতা থেকে মমতা দেখতে গিয়েছেন— এই বার্তাও কৌশলে সামনে রাখা হবে।
জেল হেফাজতে থাকা সুদীপবাবুর সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের জন্য বিশেষ আদালতের সম্মতি নেওয়া হয়েছিল। সিবিআই আদালতে বলে, যে হেতু জেলে থাকা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে সূর্যাস্তের পরে দেখা করা যায় না, অতএব সুদীপের ক্ষেত্রেও তা বলবৎ হোক। সিবিআইয়ের এহেন আর্জির কথা কানে আসার পরে দৃষ্যতই রুষ্ট হন মমতা। আদালত অবশ্য বলে, হাসপাতাল যে হেতু জেল নয়, তাই এ ক্ষেত্রে ওই নিয়ম খাটবে না।
আরও পড়ুন:একসঙ্গে চলুন, পরামর্শ মমতার
বিমানবন্দরে নেমে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছন মমতা। হাতে নোটবুক-পেন নিয়ে ভিতরে ঢুকে যান তিনি। পরে মমতা জানান, ওই নোটবুক সুদীপবাবুকে দিয়ে এসেছেন তিনি। বলেছেন, বন্দিদশার যন্ত্রণার কথা লিখে রাখতে।
দু’জনের কথোপকথনের সময়ে উপস্থিত ছিলেন সিবিআইয়ের তিন অফিসার। ছিলেন ওড়িশা সিআইডি-র আধিকারিকরাও। সূত্রের খবর, মমতা আসার পরে সুদীপবাবুর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারদের ডেকে নেওয়া হয়। সাংসদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নেন মমতা। সুদীপবাবু তখন সোফায় বসে। দলনেত্রীর হাত ধরে আবেগমথিত হয়েই তিনি বলেন, অনেক দিন এখানে হয়ে গেল। মমতা আবার তাঁর কাছে জানতে চান, হাসপাতালে চিকিৎসা বা অন্যান্য বিষয়ে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। তবে সোফায় পাশাপাশি বসে সুদীপ-মমতার বেশ কিছু ক্ষণ একান্তে কথা হয়েছে। ঘরে অন্য কারও পক্ষে যা ভাল করে জানা সম্ভব হয়নি।
সুদীপবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে তাপসের কেবিনে মিনিট সাতেক ছিলেন মমতা। কৃষ্ণনগরের সাংসদও বসেছিলেন সোফায়। তাঁর কাছেও নেত্রী জানতে চান, শরীর কেমন? হাসপাতালে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না? তাপসও বলেছেন, দীর্ঘদিন আটকে থাকার যন্ত্রণার কথা। নেত্রীর কাছে কান্নাকাটি করেন তিনিও। আর মমতার পরামর্শ, তাঁরা ভেঙে পড়লে বাইরে থেকে তাঁর লড়াইও কঠিন হয়ে যাবে। তাই মন শক্ত রাখতে হবে।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মমতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে সুদীপবাবুকে গ্রেফতারের দিন তাঁর গলায় যে ঝাঁঝ ছিল, তা এ দিন দেখা যায়নি। শুধু বলেছেন, সুদীপবাবু চেয়েছিলেন তিনি এক বার আসুন। তাই এসেছেন।