State news

প্রভাবশালী তত্ত্ব খারিজ, শর্তাধীন জামিন সুদীপের

রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার সাড়ে চার মাস পর, শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তাঁর জামিন মামলার শুনানি ছিল ওড়িশা হাইকোর্টে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ১১:০৩
Share:

রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার সাড়ে চার মাস পর, শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তাঁর জামিন মামলার শুনানি ছিল ওড়িশা হাইকোর্টে। তিনটি শর্তের বিনিময়ে সুদীপের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি জে পি দাস। সেই তিনটি শর্ত হল—

Advertisement

• ২৫ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত বন্ড জমা দিতে হবে।

• তদন্তকারী অফিসারদের কাছে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। অর্থাত্ আদালতের অনুমতি না মেলা পর্যন্ত দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

Advertisement

• জামিনে মুক্ত থাকাকালীন সাক্ষীদের প্রভাবিত করার কোনও চেষ্টা করবেন না।

রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গত ৩ জানুয়ারি সুদীপকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সে দিন রাতেই তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। পরের দিন তাঁকে ভুবনেশ্বর আদালতে তোলা হয়। কিছু দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার পর, জেল হেফাজতে যান সুদীপ। তার পর গত চার মাস অসুস্থতার কারণে ভুবনেশ্বরেরই এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। ওড়িশা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করার সময় সুদীপের অসুস্থতার যুক্তিই সবচেয়ে সামনে আনেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু সিবিআই আদালতে দাবি করে, সুদীপ অসুস্থতার নাটক করছেন। সেই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে সুদীপের আইনজীবী আদালতে তাঁর সমস্ত মেডিক্যাল নথিপত্র জমা দেন। দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের মধ্যেই সিবিআই সুদীপের বিরুদ্ধে প্রভাবশালীর তত্ত্ব খাড়া করে। বাইরে থাকলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন বলেও আদালতে দাবি করে সিবিআই। সুদীপের জামিনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থাটি এই বিষয়টি নিয়ে তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। সুদীপের জামিন প্রসঙ্গে সিবিআই আইনজীবী কে রাঘবাচারিলু বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে সিবিআইকে সুপ্রিম কোর্টে যেতে বলেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুদীপ জামিন পেয়েছেন। খুশির খবর। অনেক দিন ধরেই কষ্ট পাচ্ছিলেন। ওঁর শরীরটা একদম শেষ করে দিয়েছে। এখন ক’দিন বিশ্রাম নিক।”

ইতিমধ্যেই, গত ১৮ এপ্রিল, সুদীপকে দেখতে ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর সুদীপের প্রভাবশালী তত্ত্ব আরও জোরালো ভাবে আদালতে তুলতে থাকে সিবিআই। সিবিআই-এর আইনজীবী কে রাঘবাচারিলু সওয়ালে বলেন, ‘‘সুদীপবাবু এতটাই প্রভাবশালী, যে আদালতের অনুমতি নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।” তিনি ব্যাখ্যা দেন, পাশে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সুতরাং সুদীপ জামিনে মুক্ত হলে সাক্ষীদের অবস্থা কী হতে পারে, তা আদালতই আন্দাজ করুক।

আরও পড়ুন...
সুদীপ জামিন পেলেন, তাপস এখনও আঁধারেই

সিবিআই-এর তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, রোজ ভ্যালি তদন্ত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত অজানা অনেক কিছু তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে। রোজ ভ্যালির মালিক গৌতম কুণ্ডুকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বেআইনি এই অর্থলগ্নি সংস্থার কাছ থেকে টাকা প্রাপক হিসেবে রাজ্যের শাসক দলের আরও বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কের নামও নাকি উঠে আসছে তদন্তে। এই অবস্থায় সুদীপ জামিন পেলে তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছে সিবিআই। কিন্তু শুক্রবার সুদীপকে আদালতে তোলা হলে বিচারপতি জে পি দাস সিবিআইয়ের যাবতীয় আপত্তি খারিজ করে দেন। অসুস্থতার কারণকে গুরুত্ব দিয়ে এ দিন সুদীপের শর্তসাপেক্ষ জামিন মঞ্জুর করে দেন তিনি। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, আগামিকালই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মুক্তি পাবেন। সম্ভবত ওড়িশার হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনে তাঁকে কলকাতার কোনও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।

আরও পড়ুন: আইনের জোরালো ধারায় বেঁধে ফেলা হল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে

সুদীপের জামিন এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি তাঁর স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জামিনের খবর শুনে খুশি হয়েছি তো বটেই। কিন্তু এর বেশি কোনও কথা বলব না। যা বলার দল বলবে। দল যে ভাবে এগোতে বলবে, সে ভাবেই এগোবো।”

সিবিআই-এর অভিযোগ, সুদীপ তাঁর স্ত্রী নয়নাকে নিয়ে, ২০১২ সালের অক্টোবরে, রোজ ভ্যালির টাকায় সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ, লুসার্ন, ইতালির পিসা, রোম, ফ্লোরেন্স-সহ বিভিন্ন শহরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ জন্য যে ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তার ১৭ লক্ষ টাকাই রোজ ভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকে গিয়েছিল। সেই সংক্রান্ত নথি সিবিআইয়ের জিম্মাতেই রয়েছে। এর পাশাপাশি, রোজ ভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডর সঙ্গে সুদীপের ‘ক্লোজড ডোর’ বৈঠকের প্রসঙ্গও আদালতের সামনে তুলে ধরে সিবিআই। নানান সময়েই নিজের পদের জোর বা ক্ষমতা খাটিয়ে রোজ ভ্যালির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা সুদীপ নিয়েছেন বলে অভিযোগ সিবিআই-এর। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং প্রতারণার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯, ১২০বি ও ৪২০ ধারায় মামলা করা হয় চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইনে।

মোটামুটি একই অভিযোগে, সুদীপের আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল আর এক তৃণমূল সাংসদ তাপস পালকেও। গত ৩০ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর তাপসকেও নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনিও সুদীপের মতো একই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন