পার্থর আর্জি, মারজিত তবু ছাড়ছেন পদ

শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার মুখেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন তাঁরই ‘সরকারের লোক’, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৪:০০
Share:

শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার মুখেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন তাঁরই ‘সরকারের লোক’, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত।

Advertisement

১৪ জুলাইয়ের পরে তিনি যে আর অস্থায়ী উপাচার্যের পদে থাকবেন না, আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে চিঠি লিখে তা জানিয়ে দিয়েছেন সুগতবাবু। এমন একটা সময়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন, যখন তড়িঘড়ি স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করার কোনও উপায় নেই রাজ্য সরকারের।

স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য সার্চ কমিটিই গড়া হয়নি এখনও। ১৪ জুলাইয়ের আগে সেই কমিটি গড়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগের মতো যথেষ্ট সময়ও নেই। এই পরিস্থিতিতে ‘সরকারের লোক’ মারজিতকে তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। সুগতবাবুকে ফোন করে শিক্ষামন্ত্রীর আর্জি, ‘‘আপনি যে-ভাবে দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন, তাতে আমরা চাই, আপনিই কলকাতার উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যান।’’

Advertisement

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছেন সুগতবাবু। মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্য-পদে আর নয়। নিজের পুরনো চাকরির জায়গাতেই ফিরে যেতে চান তিনি।

অন্যান্য দিনের মতো সোমবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যান সুগতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে আমি যেতে চাই না। শিক্ষামন্ত্রী ফোন করেছিলেন। উনি চাইছেন, আমি যেন উপাচার্য-পদে থাকি। আমি ওঁকে আমার কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়েছি।’’ কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি বলতে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া চেয়ার প্রফেসর’-এর পদের নিয়মনীতি ও বিধিনিষেধের কথাই বলছেন মারজিত। ওই পদ থেকেই ‘লিয়েন’ নিয়ে তিনি অস্থায়ী উপাচার্য হয়েছিলেন। সুগতবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্য সরকার উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে কোনও রকম সাহায্য চাইলে তিনি তা দিতে প্রস্তুত। ‘‘তবে কোনও অবস্থাতেই কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী পদে যোগ দিতে পারব না,’’ স্পষ্ট করে দিয়েছেন মারজিত।

নিজেকে বরাবর সরকারের লোক বলে এসেও তিনি সেই সরকারকেই বিপদে ফেলে দিলেন কেন?

‘‘এখনও বলছি, আমি সরকারের লোক। এই সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক ভাল কাজ করেছে। আমি সরকারের ভাল চাই। রাজ্যের মানুষও যে তা চায়, সেটাও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি যে-সংস্থার স্থায়ী কর্মী, তাদের কাছেও আমার কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে,’’ বলেন সুগতবাবু।

সরকার এখন কী করবে?

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি চাই, উপাচার্যের পদে সুব্রতবাবুই থাকুন। কিন্তু উনি সেটা চাইছেন না। আমার কিছু করার নেই। তবে পদ তো শূন্য রাখা যায় না। আপাতত অস্থায়ী ভাবেই কাউকে নিয়োগ করা হবে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, দুই সহ-উপাচার্যের মধ্যে এক জনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে।

মারজিত যে-ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সামলেছেন, তার প্রশংসা করেছেন পার্থবাবু। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মীদের বড় অংশের অভিযোগ, অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে কিছুই বদলাতে পারেননি সুগতবাবু।

তিনি সব কিছু করে ফেলেছেন, এমন দাবি করেন না সুগতবাবুও। তাঁর মন্তব্য, স্নাতক স্তরের বোর্ড অব স্টাডিজ এবং ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল না-থাকায় পাঠ্যক্রমের খুব খারাপ অবস্থা হয়ে পড়েছে। ‘‘আমি চাই, যেন দ্রুত ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের নির্বাচন হয়। বোর্ড অব স্টাডিজও দ্রুত গঠন করা দরকার,’’ বলেছেন মারজিত।

নিজের কাজ সম্পর্কে সুগতবাবুর মূল্যায়ন, ২০১৫-য় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-বেসামাল অবস্থা ছিল, চলতি বছরে তা নেই। আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের কী হল? ‘‘নতুন সিন্ডিকেটের প্রথম বৈঠকেই সেই তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে,’’ বলেন মারজিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন