ভাঙড়ে তোপ কোর্টের, তলব গোয়েন্দাকর্তাকে

কখনও কখনও অতি-সক্রিয়তা তো বেশির ভাগ সময়েই নিষ্ক্রিয়তার জন্য আদালতের রোষের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। ভাঙড়ের সাম্প্রতিক গোলমাল নিয়ে পুলিশকে আবার দুরমুশ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৫২
Share:

কখনও কখনও অতি-সক্রিয়তা তো বেশির ভাগ সময়েই নিষ্ক্রিয়তার জন্য আদালতের রোষের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। ভাঙড়ের সাম্প্রতিক গোলমাল নিয়ে পুলিশকে আবার দুরমুশ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

পুলিশ ঠিক কী কারণে ভাঙড়ের দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারছে না, তার জবাব চেয়ে সিআইডি-র এডিজি রাজেশ কুমারকে তলব করেছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। ১০ মে সিআইডি-কর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে জবাব দিতে হবে বলে বুধবার নির্দেশ দেন তিনি।

সামনে সমানে গুলি চালিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারবে না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি বাগচী। তাঁর মন্তব্য, ওই দুষ্কৃতীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে না-পারলে সেটা পুলিশ-প্রশাসনেরই ব্যর্থতা।

Advertisement

১৭ জানুয়ারি ভাঙড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশের। গুলি চলে। তাতে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত এক যুবকের পরিবার মামলা দায়ের করেছে বিচারপতি বাগচীর আদালতে। এ দিন সেই মামলার শুনানিতেই পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে তোপ দাগেন বিচারপতি। সংঘর্ষ ও গুলি চালানোর ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি-কে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু নিহত যুবক মফিজুল হকের পরিবারের অভিযোগ, সিআইডি তদন্ত করে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করছে না।

সরকার এর আগের শুনানিতে আদালতে জানিয়েছিল, পুলিশের গুলিতে ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়নি। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারপতি বাগচী রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে-বুলেটে দুই যুবকের মৃত্যু হয়, সেগুলো কী ধরনের বুলেট ছিল, কোন বন্দুক থেকে তা ছোড়া হয়েছিল, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ ছিল, তদন্তের কতটা কী অগ্রগতি হল, নির্দিষ্ট সময় অন্তর তার রিপোর্টও দিতে হবে আদালতে।

সরকারী আইনজীবী শুভব্রত দত্ত এ দিন আদালতে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞের রিপোর্ট দাখিল করে জানান, ভাঙড়ে গুলি ছোড়া হয়েছিল দেশি বন্দুক থেকে। গুলির বোর ছিল আট মিলিমিটার। বিচারপতি বাগচী তা শুনে সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘‘কে বা কারা ওই গুলি ছুড়েছিল?’’ সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ‘‘সেটা জানা যাচ্ছে না।’’ এ কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি। এবং প্রশ্ন তোলেন চোখের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলি চালাতে দেখেও পুলিশ তাদের শনাক্ত করে গারদে পুরতে পারেনি কেন?

সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান, গুলি চালানোর ঘটনায় কয়েক জনকে চিহ্নিত করা গেলেও যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণের অভাবে তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ভাঙড়ের কাশীপুর এলাকায় জমি নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক গোলমাল চলছে। সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্য শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বাগচী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কোনও এলাকায় সামাজিক-রাজনৈতিক গোলমাল হলে সেখানে খুনের ঘটনা ঘটতেই হবে, কোন আইনে এ কথা লেখা আছে জানান!’’ নীরব থাকেন সরকারি কৌঁসুলি।

বিচারপতি সরকারি কৌঁসুলিকে নির্দেশ দেন, ‘‘দোষীদের গ্রেফতার করে কাঠগড়ায় তুলুন। সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন