ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট, মৃত্যু সর্পদষ্ট ছাত্রীর

দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁক সত্ত্বেও অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে বছর পনেরোর মেয়েটিকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাতে বাড়ির উঠোনে সাপে কেটেছিল মেয়েটিকে। হাসপাতালের বদলে গ্রামের গুণিনের কাছে নিয়ে যান পরিজনেরা। দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁক সত্ত্বেও অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে বছর পনেরোর মেয়েটিকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

সালানপুরের এথোড়া গ্রামে বুল্টি বাউড়ি নামে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পরে তার বাড়ির লোকজনের খেদ, ‘‘গুণিনের কাছে না গিয়ে শুরুতেই হাসপাতালে গেলে মেয়েটা হয়তো বাঁচত!’’ আসানসোল শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে এই ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে সচেতনতা নিয়ে। বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য প্রসূন রায় বলেন, ‘‘গ্রামে-গ্রামে এ নিয়ে প্রচার করেও মানুষের হুঁশ ফেরাতে পারছি না। এই ঘটনা উদ্বেগজনক ও দুর্ভাগ্যের।’’

শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ উঠোনে দাঁড়িয়ে গল্প করার সময়ে বুল্টির পায়ে সাপে ছোবল দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সে নেতিয়ে পড়ে। তার দাদু পরেশ বাউড়ি জানান, সঙ্গে-সঙ্গে গ্রামের এক গুণিনের কাছে নিয়ে যান নাতনিকে। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত ঝাড়ফুঁক চলে। রাত ১০টা নাগাদ গুণিনই মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। রাত ১১টা নাগাদ আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

গোড়াতেই বুল্টিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না কেন? পরেশবাবুর জবাব, ‘‘সালানপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গ্রাম থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে। জেলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। তখন গাড়িও পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমরা গুণিনের কাছে যাই।’’ পরে অবশ্য গাড়ি জোগাড় করেই তাঁরা হাসপাতালে যান। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দু’ঘণ্টা সময় নষ্ট না করে কোনও ভাবে হাসপাতালে পৌঁছনোর চেষ্টা করলে মেয়েটা হয়তো বেঁচে যেত!’’

আসানসোল হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সাপে কাটা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। সময় নষ্ট না করে সোজা যেন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, সেই পরামর্শও দিয়ে থাকি আমরা।’’ বিজ্ঞানমঞ্চের প্রসূনবাবু জানান, তাঁরা শীঘ্রই ওই এলাকায় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচারে নামবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন