সিবিআই রিপোর্টে ‘গুরুতর বিষয়’, চোখ বুজে থাকব না, রাজীব মামলায় মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

সিবিআইয়ের এই ‘খুব, খুব গুরুতর বিষয়’-এর ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:০১
Share:

রাজীবকুমার। ফাইল চিত্র।

তখনও সুপ্রিম কোর্টে মধ্যাহ্নভোজনের বিরতির ঢের দেরি। সিবিআই বনাম রাজীব কুমারের মামলার শুনানি চলছে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিবিআইয়ের কাছে জানতে চাইল, শিলংয়ে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কী ফল বেরোল? সিবিআইয়ের হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল হলুদ রঙের মুখ বন্ধ খামে বিচারপতিদের হাতে ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ তুলে দিলেন। তা হাতে নিয়ে এক মনে পড়তে শুরু করলেন বিচারপতিরা। পড়া শেষ হতে তিন বিচারপতির মধ্যে আলোচনা শুরু হল। বিরতির দশ মিনিট আগেই প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়ে দিলেন, বিরতির পরেই ফের শুনানি শুরু হবে।

Advertisement

বোমাটা ফাটল বিরতির পর। ফিরে এসে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করলেন, ‘‘সিবিআই খুব, খুব গুরুতর কিছু বিষয় তুলে ধরেছে। এবং তা দেখে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে চোখ বুজে বসে থাকা সম্ভব নয়।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘যদি কোনও খুব, খুব গুরুতর বিষয় আমাদের সামনে আসে, আমরা কি চোখ বুজে থাকব? যথেষ্ট গুরুতর কিছু বিষয় আমাদের নজরে আনা হয়েছে।’’

সিবিআইয়ের এই ‘খুব, খুব গুরুতর বিষয়’-এর ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই গোপন স্টেটাস রিপোর্টে যে অভিযোগ তুলেছে, তাদের তা তথ্যপ্রমাণ-সহ হলফনামা দিয়ে কোর্টকে জানাতে হবে।

Advertisement

ওই ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দেওয়ার পাশাপাশি সিবিআই সুপ্রিম কোর্টের কাছে ‘একটি আর্জি’-ও জানিয়েছে। কী সেই আর্জি, তা নিয়ে অবশ্য বিচারপতি বা আইনজীবীরা কোনও মন্তব্য করেননি। তবে কোর্টের নির্দেশ, সিবিআইকে আগামী দশ দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে ওই আর্জি। তার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার তার বক্তব্য জানাবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ খতিয়ে দেখব।’’

আইনজীবী ও রাজনীতিকেরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে সিবিআইয়ের সংঘাত নতুন মোড় নিতে পারে এ বার। কারণ প্রধানত তিনটি:

এক, সিবিআই সূত্রের খবর, দশ দিন পরে সিবিআই শীর্ষ আদালতে যে আর্জি জানাবে, তাতে রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানানো হতে পারে।

দুই, সিবিআই তদন্তে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসন অসহযোগিতা করছে বলে রাজীবের পাশাপাশি মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজির বিরুদ্ধেও আদালত অবমাননার মামলা করেছিল সিবিআই। রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি আর্জি জানান, মুখ্যসচিব ও ডিজিকে এই মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হোক। প্রধান বিচারপতি তা আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন।

তিন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আজ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, রাজ্যের কয়েক জন আইপিএস অফিসার ‘রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে’ যোগ দিয়েছিলেন। তা চার দিন আগে, ২২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। কারণ, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ ভাবে পরিচালনার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশ কমিশনারের বাসভবনে সিবিআই হানার প্রতিবাদে আইপিএস অফিসারেরাও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নামঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন বলে সিবিআই আগেই অভিযোগ তুলেছিল। মুখ্যসচিব, ডিজিরা যুক্তি দিয়েছিলেন, তাঁরা সেখানে সরকারি দায়িত্ব পালন করছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী একমাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম পুলিশি দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাকিরা রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন।

এ দিন সিবিআইয়ের ডিরেক্টর ঋষিকুমার শুক্লের হলফনামা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বেণুগোপাল ফের অভিযোগ তুলেছেন, পুলিশ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে।

সিবিআই তদন্ত হাতে নেওয়ার আগে রাজীব কুমারের নেতৃত্বে সিট তদন্ত করছিল। তাদের কাছে সারদা মামলার মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের পাঁচটি মোবাইলের সিডিআর (কল ডাটা রেকর্ডস) চাওয়া হয়। কিন্তু ১৪ মাস ঘোরানোর পর পুলিশ পুরো সিডিআর দেয়নি। সিবিআই পুলিশের দেওয়া সিডিআর ও মোবাইল পরিষেবা সংস্থার থেকে মেলা তথ্য মিলিয়ে দেখেছে, সুদীপ্ত-দেবযানীর কথাবার্তার পুরো তথ্য সিবিআইকে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের আইনজীবী বিশ্বজিত দেবের মত, ‘‘সিবিআই নিজের অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে বলেছিল, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। এখন বলছে, সিডিআর-এ ফারাক রয়েছে। আগে বলেছিল, রাজীব কুমার গরমিল করেছে। এখন বলছে রাজ্য পুলিশ করেছে।’’ সিবিআই ডিরেক্টরের হলফনামার জবাবে রাজ্যের হলফনামাতেও একই যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিযোগ, ফরেনসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা মনে করছে, তাঁদের সিদ্ধান্ত যুক্তিগ্রাহ্য। তদন্তে বাধা ও দেরি করানোর চেষ্টা হয়েছে।

সিবিআই ডিরেক্টরের হলফনামা ছাড়াও, কলকাতায় নিযুক্ত সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব ও ডিএসপি তথাগত বর্ধনের হলফনামাও খতিয়ে দেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানার পরে কলকাতা পুলিশের হাতে শ্রীবাস্তব ও বর্ধনকে হেনস্থা হতে হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার বক্তব্য, অভূতপূর্ব অসহযোগিতা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন