পুলিশে খালি পদের খতিয়ান তলব কোর্টের

সব রাজ্যের পুলিশেই শূন্য পদ শত শত। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। এই সংক্রান্ত একটি মামলায় সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে হলফনামা দিয়ে নিজের পুলিশবাহিনীর শূন্য পদের খুঁটিনাটি জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। এর জন্য এক মাস সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
Share:

সব রাজ্যের পুলিশেই শূন্য পদ শত শত। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। এই সংক্রান্ত একটি মামলায় সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে হলফনামা দিয়ে নিজের পুলিশবাহিনীর শূন্য পদের খুঁটিনাটি জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। এর জন্য এক মাস সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের তিন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, পুলিশে পদ খালি পড়ে থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মামলায় প্রধান বিচারপতি এবং অন্য দুই বিচারপতি এন ভি রামানা এবং ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলফনামা না-দিলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে আদালতে হাজির থেকে সবিস্তার তথ্য জানাতে হবে। যে-মামলার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ, তার আবেদনকারীর বক্তব্য ছিল, গোটা দেশে পুলিশে পাঁচ লক্ষ ৪২ হাজার পদ শূন্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, এটা তার অন্যতম কারণ।

পশ্চিমবঙ্গের পুলিশবাহিনীতেও অনুমোদিত পদের চেয়ে কর্মীর সংখ্যা বেশ কম। থাকার কথা এক লক্ষ দু’হাজার ৪৮৯ জন পুলিশকর্মী, আছেন ৬৫ হাজার ৫১৮ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩৬ হাজার ৯৭১টিই খালি। এত কম পুলিশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে যে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে, তা মানছেন বাহিনীর কর্তাদের একাংশ। তাঁদের হিসেব, লোকসংখ্যার নিরিখে জেলা সদরের যে-থানায় ১৫০ পুলিশকর্মী থাকা দরকার, সেখানে আছেন একশোরও কম। রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘গ্রামীণ থানাগুলির অবস্থা আরও করুণ। ওই সব অঞ্চলে প্রায় সব থানারই এক এলাকা বড়, কিন্তু পুলিশকর্মী কম। শহরাঞ্চলের মতো যথেষ্ট সংখ্যায় যানবাহনও নেই। অনেক সময়েই তো সাধারণ মানুষের মোটরবাইকে চেপে ডিউটি করতে যেতে হয়।’’

Advertisement

আইনশৃঙ্খলা সামলাতে সমস্যা তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে লোকাভাবে তদন্তের কাজেও প্রতি মুহূর্তে হোঁচট খেতে হচ্ছে পুলিশকর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, সাব-ইনস্পেক্টরেরাই (চলতি কথায় দারোগা) বাহিনীর শিরদাঁড়া। যাবতীয় তদন্তের দায়িত্ব তাঁদের উপরেই ন্যস্ত। কিন্তু সেখানেও টানাটানি। নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্য পুলিশে সাব-ইনস্পেক্টরের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২৭৯৬, কিন্তু কর্মী আছেন ১৫৩৩ জন। অর্থাৎ খালি পড়ে সাড়ে ১২শোর বেশি পদ। কলকাতার লাগোয়া একটি জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এক-একটি থানায় এক-এক জন দারোগার হাতে গড়ে ৯৫টি মামলার তদন্ত দেওয়া আছে। কিন্তু সে-সব তদন্ত হবে কখন? নিত্যদিনের আইনশৃঙ্খলা সামলাতেই যে প্রাণ ওষ্ঠাগত।’’

এই সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতি অবশ্য এক দিনে তৈরি হয়নি। বাম আমলেও রাজ্যের সব থানায় সাব-ইনস্পেক্টরের ঘাটতি ছিল। সেই সব শূন্য পদ পূরণ করা হয়নি। উল্টে খালি পদের সংখ্যা বেড়েছে। ‘‘মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বাম আমলে অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরদের (এএসআই) তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। এএসআই-এর সংখ্যাও তো দিন দিন কমেই চলেছে,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

কনস্টেবল-পদের অবস্থাও কহতব্য নয়। নবান্নের সূত্র জানাচ্ছে, পুলিশের ওই নিচু তলায় অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩৩,৫৬১। কিন্তু কর্মী আছেন ১৮,৩০০ জন। সব মিলিয়ে সাড়ে ১২ হাজার কনস্টেবল-পদ খালি এবং সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। কারণ, যে-হারে অবসরের সংখ্যা বাড়ছে, সেই তুলনায় নিয়োগ হচ্ছে কম—জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন