রাজ নয়, উত্তরে নজরদারির ভার সুরজিৎকেই

একাধিক আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেষা উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার রাশ শক্ত হাতে ধরতে ফের পুলিশের উপর মহলে রদবদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের অন্দরের খবর, তাতে কারও দায়িত্ব কিছুটা কমে গিয়েছে। কারও কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৯
Share:

একাধিক আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেষা উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার রাশ শক্ত হাতে ধরতে ফের পুলিশের উপর মহলে রদবদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের অন্দরের খবর, তাতে কারও দায়িত্ব কিছুটা কমে গিয়েছে। কারও কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। যেমন, এত দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি (হোমগার্ড) রাজ কানোজিয়া প্রাথমিক ভাবে উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার তদারকি করতেন। সেই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশও ছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক এক নির্দেশনামায় স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার সামগ্রিক তদারকি করবেন খোদ ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থই।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, ডিজি (হোমগার্ড) এত দিন উত্তরবঙ্গের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি)’-এরও দেখভালও করতেন। যে এসওজি মূলত জঙ্গি গতিবিধি, নাশকতা প্রতিরোধের কাজ করত। এখন নয়া নির্দেশিকায় এডিজি (সিআইডি)-র অধীনে একটি বিশেষ সেল গড়ে সেই কাজের দায়িত্ব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। তা নিয়ে পুলিশের ভেতরেই নানা বিতর্ক, আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু, রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, এখন থেকে রাজ্যের আর পাঁচটা এলাকার মতো উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার তদারকিও সরাসরি ডিজিই করবেন।

মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই ডিজি হোমগার্ডকে উত্তরবঙ্গের ৫ জেলার চোলাচালান, জাল নোট ও সীমান্ত-অপরাধ দমনের ব্যাপারে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার পরে তাঁর হাত থেকে উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক তদারকির দায়িত্ব কিংবা এসওডি-র দায়িত্ব সরিয়ে নেওয়াটা প্রকারান্তরে ডানা ছাঁটারই সামিল কি না তা নিয়ে পুলিশের মধ্যেই অনেকে আলোচনা করছেন। কিন্তু, রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, রাজ হোমগার্ডের ডিজি ছাড়াও উপকূল রক্ষী বাহিনীর দেখাশোনা করেন। তাঁকে কদিন আগে সদ্যগঠিত রাজ্য ক্রীড়া উন্নয়ন পর্ষদেরও চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ফলে, সব মিলিয়ে দায়িত্বের দিক থেকে ডিজি হোমগার্ডের গুরুত্ব কমানো হয়নি বলেই প্রশাসনের ওই কর্তার দাবি।

Advertisement

তবে পুলিশের অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব নেটওয়ার্কে উত্তরবঙ্গের পুলিশ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য পেয়েই এই রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন, উত্তরবঙ্গের সীমান্তের কিছু এলাকা নিয়ে মমতা অনেক দিন ধরেই উদ্বিগ্ন। একে তো এলাকায় মাঝে-মধ্যেই মাথাচাড়া দেয় চোরাকারবারের সমস্যা। তার উপরে আবার জঙ্গিরা শিলিগুড়ি করিডর ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। খবর পৌঁছে গিয়েছে প্রশাসনের কানে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বড়ো জঙ্গিরা শিলিগুড়িকে ব্যবহার করে নেপালে যাতায়াত করছে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি-লিঙ্কম্যানরাও ঢুকছে চোরাপথে।

এ ছাড়া, শিলিগুড়িতে একাধিক পানশালায় ভিন্ রাজ্যের দুষ্টচক্র সক্রিয়— এমন অভিযোগও পৌঁছেছে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, এই সবের উপরে নজরদারির দায়িত্ব সরাসরি ডিজি সুরজিৎবাবুর হাতে থাকলেই যে সুবিধে, মুখ্যমন্ত্রীও সেই ব্যাপারে সহমত হয়েছেন। তাই এ বার রাজকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে ডিজি সুরজিৎবাবুকেই সামগ্রিক তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন।

শুধু তা-ই নয়, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কাজকর্মে আরও গতি আনতেও পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, তাঁর নির্দেশে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কাজের তদারকির বাড়তি দায়িত্ব এডিজি উত্তরবঙ্গ এন রমেশবাবুকে দিয়েছেন ডিজি।

পুলিশের এক কর্তা জানান, দায়িত্বের এই রদবদল থেকে বোঝাই যাচ্ছে, উত্তরবঙ্গকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় ইনিংসে একটি রানও যাতে বাজে খরচ না হয়, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নজর এখন সে দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন