পাহাড়ে বাংলা ঠেকাতে মোদীকে চিঠি সুরেন্দ্রর

গত ১৬ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে ‘ত্রিভাষা সূত্র’ মেনে বিদ্যালয় স্তরে তিনটি ভাষা শিক্ষার কথা ঘোষণা করেন। সেই নীতি অনুযায়ী প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি ভাষা হিসেবে বাংলা পড়তেই হবে সমস্ত পড়ুয়াকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাংলা পড়তেই হবে স্কুলে। তার জন্য বোর্ডের পরীক্ষা দিতে হবে, এমন নয়। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদের আর্জি— পাহাড়ে বাংলা ‘চাপিয়ে দেওয়া’ আটকানো হোক। টানা প্রতিবাদের পথে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও। ভাষা নিয়ে রাজনীতির পারদ চড়ছে পাহাড়ে।

Advertisement

গত ১৬ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে ‘ত্রিভাষা সূত্র’ মেনে বিদ্যালয় স্তরে তিনটি ভাষা শিক্ষার কথা ঘোষণা করেন। সেই নীতি অনুযায়ী প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটি ভাষা হিসেবে বাংলা পড়তেই হবে সমস্ত পড়ুয়াকে। তবে বোর্ডের পরীক্ষার চাপ নেই। বেসরকারি স্কুলগুলির সঙ্গে বৈঠকে সে বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বলেছেন, ‘‘বাংলার বাসিন্দাদের অন্তত স্কুল স্তরে বাংলা শেখা জরুরি। বাংলার সংস্কৃতি মজ্জাগত করতে এটা অন্যতম মাধ্যমও বটে।’’

এই ঘোষণারই বিরোধিতায় সরব দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। অসলো থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। সুরেন্দ্রর দাবি, দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্সের অধিকাংশ বাসিন্দা বাংলার চেয়ে হিন্দি অথবা নিজেদের স্থানীয় ভাষা পড়তে
চান। সেখানে জোর করে বাংলা চাপানো হচ্ছে। যা ভাষাগত ভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপের সামিল। মোদীর কাছে তাঁর আবেদন, তিনিই যেন মমতাকে এ থেকে বিরত করেন।

Advertisement

নবান্নের যদিও বক্তব্য, কোনও মানুষ যে রাজ্যের বাসিন্দা, সেই রাজ্যটির ভাষা শিক্ষার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, কর্নাটকের স্কুলগুলিতেও মরাঠি, তামিল, কন্নড় পড়তে হয়। তা হলে বাংলা পড়তে আপত্তি কোথায়? সুরেন্দ্রর যুক্তি, পাহাড়ের অধিকাংশ পড়ুয়া প্রথম ভাষা হিসেবে পড়ে নেপালি।
দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি। তৃতীয় ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে তারা হিন্দি পড়ে। কারণ, রাষ্ট্রভাষা শিখলে সারা দেশে কাজে লাগে। কিন্তু মমতা হিন্দি হটিয়ে বাংলা বাধ্যতামূলক করছেন, যা মেনে নেওয়া যায় না। সুরেন্দ্র মতে, সরকার ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে বাংলা রাখতেই পারে, কিন্তু সাংবিধানিক ভাবে তা বাধ্যতামূলক করতে পারে না।

বাংলা বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দু’দিন পাহাড়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে তারা। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর মিরিক সফরের সময়েও মোর্চা প্রতিবাদ জানাবে। ফলে ধীরে ধীরে পাহাড় ফের উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, এখনও বাংলা ভাষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আইন করতেও সময় লাগবে। তার মধ্যে যে ভাবে মোর্চা মানুষকে খেপাচ্ছে, তা নিম্নমানের রাজনীতি। পাহাড়ে আরও বেশি উন্নয়নের মাধ্যমেই এর মোকাবিলা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন