প্রতীকী ছবি।
ধারাবাহিক তল্লাশি অভিযান জারি রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও অধরাই থেকে গিয়েছে অভিযুক্ত কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ও তার দলবল। তবে তাকে গ্রেফতার করতে পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা এলাকাতেও নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। এ দিকে তার বিরুদ্ধে আসানসোলের যে ব্যবসায়ীর জমি ও ফ্ল্যাট কব্জা করার অভিযোগ উঠেছে, প্রয়াগ যাদব নামে ওই ব্যবসায়ীকে বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার হিরাপুর থানায় লিখিত অভিযোগে ব্যবসায়ী আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা প্রয়াগ যাদব জানিয়েছেন, ২০১৬-র অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় ছেলে ও ভাইপো রাধানগর রোড এলাকার একটি মন্দিরে পুজো দিতে যান। পুজো দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় ডলি লজ এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু ও তাঁর দলবল ওই দু’জনের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলে অপহরণ করে স্থানীয় একটি ক্লাব ঘরে নিয়ে যায়। অভিযোগ, তাদের বেধড়ক মারধরও করা হয়। পরে লোক মারফত খবর পাঠিয়ে তাঁকে ওই ক্লাবে ডেকে পাঠানো হয় বলে দাবি প্রয়াগবাবুর।
ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘কৃষ্ণেন্দু ও তার লোকজন আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে কারখানার জমি ওর সংস্থার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। না হলে তিন জনকেই গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে বড়তোড়িয়া মৌজার অন্তর্গত গোপালপুরের ৪০ কাঠা জমিটা লিখে দিই।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই জমির বর্তমান বাজারদর প্রায় তিন কোটি টাকা। ওই ঘটনার দিন কয়েক বাদে বার্নপুর রোড লাগোয়া একটি বহুতলের আবাসনের প্রায় ২৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট থেকে ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারকে উৎখাত করে তার কব্জা নেয় কৃষ্ণেন্দু ও তার দলবল। কিন্তু এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, কেন প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পরে কেন অভিযোগ করা হল? যদিও ওই ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘এত দিন আতঙ্কে মুখ খুলতে পারিনি। এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই আর পারলাম না। শেষমেশ পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্তে নামে পুলিশ। বুধবারই ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাট দখল মুক্ত করে নিজেদের জিম্মায় নেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার জমিটিও পুলিশ নিজের দখলে নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই জমির পাশেই নিজের একটি দোতলা বাড়ি আছে ওই ব্যবসায়ীর। সেখানেই সপরিবারে তিনি বসবাস করেন। তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে প্রহরা বসানো হয়েছে। কেন পুলিশি প্রহরা দেওয়ার দরকার হল? কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস জানিয়েছেন, জমি ও ফ্ল্যাট কব্জা করার পর থেকেই কৃষ্ণেন্দুর দলবল ওই ব্যাবসায়ীকে কার্যত নজরবন্দি করে রেখেছিল। কোনও ভাবেই সে যেন পুলিশের কাছে যেতে না পারে, তা আটকাতে এরা বন্দুক নিয়ে ব্যবসায়ীর বাড়ির চারপাশে ঘোরাফেরা করত। পুলিশ কর্তার দাবি, তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেই পুলিশি প্রহরা দেওয়া হয়েছে। অনমিত্রবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ অভিযুক্তের খোঁজে জোরদার তল্লাশি চালাচ্ছে। দ্রুত ধরা পড়বে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বার্নপুররোড লাগোয়া স্থানীয় একটি ক্লাবের সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষ্ণেন্দু। কব্জা করে রাখা ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটটি উদ্ধারে গিয়ে, সেখান থেকে ক্লাবের নামে ছাপ মারা বেশ কিছু নথি ও কাগজ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, এই ক্লাবের গতিবিধির উপরেও নজর রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে ক্লাবের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।