ঘরে ঘুণ, সাফ করার ডাক সূর্যদের

এক দিকে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের দক্ষিণপন্থার রাজনীতির বিপদ। অন্য দিকে তৃণমূলের দাপটে রাজ্যে দিশাহারা অবস্থা। এই কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর দৈন্য দশা যে তাঁদের ভোগাচ্ছে, খোলাখুলিই তা কবুল করে নিলেন বাম শিবিরের দুই সেনাপতি বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁদের সাফ কথা, দলে ঘুণ ধরেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

মুজফ্ফর আহমেদের ১২৮তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: সুমন বল্লভ।

এক দিকে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের দক্ষিণপন্থার রাজনীতির বিপদ। অন্য দিকে তৃণমূলের দাপটে রাজ্যে দিশাহারা অবস্থা। এই কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর দৈন্য দশা যে তাঁদের ভোগাচ্ছে, খোলাখুলিই তা কবুল করে নিলেন বাম শিবিরের দুই সেনাপতি বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁদের সাফ কথা, দলে ঘুণ ধরেছে। ঘর সাফ-সুতরো করতে না পারলে সামনে এগোনো কঠিন। কলকাতায় রাজ্য সিপিএমের আসন্ন প্লেনামের আগে দলের দুই শীর্ষ নেতার এমন স্বীকারোক্তি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

এ দেশে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্ফর আহমেদের (কাকাবাবু) ১২৮তম জন্মদিন পালনের মঞ্চকে আত্মসমীক্ষার জন্যই ব্যবহার করেছেন বিমানবাবু, সূর্যবাবুরা। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শুক্রবার দুই নেতাই প্রথমে ব্যাখ্যা করেছেন, দেশ ও রাজ্য রাজনীতি কেন তাঁদের এখন বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেই সূত্রেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘এ সবের মোকাবিলা করতে গেলে একটা পার্টি চাই। যে পার্টি কাকাবাবুরা গড়ে তুলেছিলেন। পার্টিতে এখনও সব ঠিক নেই। কিছু লোক রয়ে গিয়েছেন, যাঁদের থাকার প্রয়োজন নেই, অধিকারও নেই। আবার বাইরে বহু পুরুষ-মহিলা আছেন, কাজ করছেন, যাঁদের পার্টিতে নিয়ে আসা দরকার।’’ একই সুরে সূর্যবাবুর আগেই দলের পলিটব্যুরোর প্রবীণ সদস্য বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘পার্টিতে ঘুণ ধরেছে। এটা পরিষ্কার করতে হবে। সব দায় কর্মীদের নয়। আমি থেকে শুরু করে নেতাদেরও দায়-দায়িত্ব আছে।’’

বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা ঠিক হয়েছিল না ভুল, এই বিতর্কে জড়িয়ে থেকেছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। বৈঠকের পর বৈঠক কেটেছে শুধু এই নিয়েই! সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। সেপ্টেম্বরের শেষে রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনাম থেকে আলিমুদ্দিন যে ঘরের দিকে নজর দিতে চাইছে, দলের মধ্যে দোষ-ত্রুটি চিহ্নিত করতে চাইছে, সিপিএম নেতাদের বক্তব্য থেকে এখন তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। সূর্যবাবু যেমন এ দিন আহ্বান করেছেন, ‘‘পার্টি পুনর্গঠন করতে হবে।’’

Advertisement

সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, শাসক দলের দাপটে রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার বাম কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। কেউ কেউ ঘরে ফিরতে গিয়েও খুন হয়েছেন। বহু জায়গায় বিরোধীদের কার্যালয় বন্ধ। পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার সদস্য, বিধায়ক পর্যন্ত শাসক দলে নাম লেখাচ্ছেন। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে তৃণমূল দল ভাঙাচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গেলে অন্তত কমিউনিস্ট পার্টির যে আদর্শগত ভিত থাকতে হয়, সেই জোর হারিয়ে ফেলার কথা এ দিন সরাসরিই উঠে এসেছে সূর্যবাবুদের মুখে। দলের রাজ্য সম্পাদক প্রকাশ্যেই বলেছেন, গণতন্ত্রের উপরে মারাত্মক আক্রমণ চলছে। পরিস্থিতি খুবই কঠিন। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে কাকাবাবুরা যে অবস্থায় শূ্ন্য থেকে পার্টি গড়ে তুলেছিলেন, তার চেয়ে তো পরিস্থিতি কঠিন বলা যায় না!

বিমানবাবু এ দিন বলেন, দলে আরও বেশি করে সর্বক্ষণের কর্মী চাই। তাঁদের গুণগত মানও ভাল হওয়া চাই। কিন্তু সর্বক্ষণের কর্মীদের রাখতে গেলে ‘বেঁচে থাকার মতো ভাতা’ দিতে হবে। সেই ভাতা আসে অন্য কর্মীদের দেওয়া লেভি থেকে। বিমানবাবুর আর্জি, প্রকৃত আয় গোপন না করে সকলে যদি লেভি দেন, তা হলে সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা দিতে সুবিধা হয়। অর্থাৎ দলের একাংশের মধ্যে যে ‘অসততা’ আছে, স্বীকারই করে নিয়েছেন তিনি। তবে স্বীকারোক্তির পরেও কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে দলের মধ্যেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন