বসে থাকব না আগুন লাগলে, দলে অনড় সূর্য

পলিটব্যুরোর তাত্ত্বিক ফরমান বা প্রকাশ কারাটদের ছড়ির কাছে আর মাথা নোয়াতে চায় না আলিমুদ্দিন! বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের ময়না তদন্তে রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসার আগে দলের অন্দরে তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রাখছেন বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

পলিটব্যুরোর তাত্ত্বিক ফরমান বা প্রকাশ কারাটদের ছড়ির কাছে আর মাথা নোয়াতে চায় না আলিমুদ্দিন! বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের ময়না তদন্তে রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসার আগে দলের অন্দরে তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রাখছেন বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

ভোটে সাফল্য না পেলেও তৃণমূল এবং বিজেপির মোকাবিলায় রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট যে বজায় থাকবে, তা বুঝিয়ে দিতে দিল্লির সম্মতির অপেক্ষা করেননি সূর্যবাবুরা। পলিটব্যুরো শেষ পর্যন্ত বঙ্গ ব্রিগেডের যুক্তি মেনে নিয়েই বলেছে, সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করেই বাংলায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। কিন্তু তার আগে কারাট বাহিনীর চাপে পলিটব্যুরো এটাও বলতে ভোলেনি যে, বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করার বঙ্গীয় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। দিল্লিতে আগামী ১৮-২০ জুন কেন্দ্রীয় কমিটির আসন্ন বৈঠকেও এই প্রশ্নে সূর্যকান্ত-বিমান বসুদের কাঠগড়ায় তোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে কারাট শিবিরে। দলের মধ্যে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সূর্যবাবু কিন্তু স্পষ্ট বার্তা দিয়ে রাখছেন, ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়েই নেভাতে হবে! কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতির ভরসায় থাকলে চলবে না!

কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাওয়ার আগে ভোটের ফলাফল পর্যালোচনার জন্য আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠক বসবে ১১-১২ জুন। তার আগে এখন চলছে জেলা কমিটিগুলির বৈঠক। যার বেশ কয়েকটায় উপস্থিত থাকছেন স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে কলকাতা জেলা কমিটির এমনই বৈঠকে সূর্যবাবু শনিবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে তাঁরা ভুল কিছু করেননি। এমনকী, ভোট চলাকালীন মানুষের জোট ডবল সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে জাতীয় মন্তব্যও তিনি করেছিলেন কৌশলগত কারণে। ভোটে হেরে যাওয়ার পরে রাজ্য নেতৃত্বের দিকে আঙুল তোলার যে প্রবণতা জেলা স্তরের কিছু অংশে শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে রাজ্য সম্পাদকের হুঁশিয়ারি বুঝিয়ে দিচ্ছে— এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠক উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট!

Advertisement

জোটের প্রশ্নে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর একাংশ গোড়া থেকেই বিরূপ ছিল। ভোটে জোটের হয়ে কলকাতা সিপিএমের সব অংশ একই রকম ভাবে সক্রিয় হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই কলকাতা জেলা সিপিএমের আসরকেই সূর্যবাবু বেছে নিয়েছেন জোট নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়ার জন্য। সিপিএম সূত্রের খবর, সূর্যবাবু বৈঠকে বলেছেন, দলের মধ্যে আলোচনা করে মানুষের জোট গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল সময় ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে। শুধু কিছু নেতা বা কমিটির কথায় জোট হয়নি। হয়েছিল তৃণমূল স্তরের চাহিদা বিবেচনা করে। ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়েই তার মোকাবিলা করতে হয়। তখন কেউ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাব বা বিবৃতি হাতে নিয়ে বসে থাকে না!

দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের দিকে তোপ দাগার পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদক সিপিএমের অন্দরে দোষারোপের পালাও বন্ধ করার বার্তা দিয়েছেন। ভোট-পর্বের মাঝপথেই সূর্যবাবু মন্তব্য করেছিলেন, মানুষের জোট একশো (আসন) পেরিয়েছে। ডবল সেঞ্চুরি তাদের লক্ষ্যে। সেই মন্তব্য উল্লেখ করেই সূর্যবাবু বৈঠকে বলেছেন, এখন কেউ কেউ ওই ধরনের কথা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সূর্যবাবুর যুক্তি, যুদ্ধে সব সময়েই কিছু রণকৌশল থাকে। সৈনিকদের উজ্জীবিত করে ময়দানে নামাতে হয়। সংগঠনের জন্য সেই কৌশলই তিনি নিয়েছিলেন। আগেই হার স্বীকার করে নেওয়ার কোনও ইচ্ছা ছিল না! আর জেলা থেকে যাঁরা এ সব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের উদ্দেশে রাজ্য সম্পাদকের বার্তা, ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে জেলা নেতৃত্ব রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। সে সব আলিমুদ্দিনে রাখা আছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে সে সব রিপোর্ট পেশ করলেই বোঝা যাবে, কে কেমন পরিস্থিতি আঁচ করেছিল!

সিপিএমেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘নিজেদের সিদ্ধান্তকে রক্ষা করতে দলের মধ্যে এমন কড়া অবস্থান স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে কোনও রাজ্য সম্পাদক নেননি!’’ কলকাতা জেলার এই বৈঠকেও ভোটে পরাজয়ের জন্য জোটের সিদ্ধান্তকে দায়ী করতে চেয়েছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু পরে রাজ্য সম্পাদকের বার্তাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ধাক্কা খেলেও ভবিষ্যতের ভরসা আপাতত জোটই। রাজভবনে একত্রে দরবার বা ধর্মতলায় একসঙ্গে ধর্না-অবস্থান করে সূর্যবাবু-অধীর চৌধুরীরা যে ভবিষ্যতের পথে ইতিমধ্যে হাঁটতেও শুরু করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন