West Bengal Assembly Session

বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচে ‘স্বচ্ছতা’ আনতে বিধানসভায় পাশ ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট বিল

বুধবার বিধানসভায় পেশ হবে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিক্রয় কর (সংশোধনী) বিল ২০২৫’। বুধ ও বৃহস্পতিবার এই বিল নিয়ে আলোচনা হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ১৮:১৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচে স্বচ্ছতা আনতে চেয়ে পুরনো আইন সংশোধন করে বিল এনেছে রাজ্য সরকার। সেই ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট (সংশোধনী) বিল’ মঙ্গলবার বিধানসভায় পাশ হল। বিলের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, বিলে মহিলা চিকিৎসক, রোগীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি নিয়ে পদক্ষেপ করা হয়নি। শুভেন্দুর অভিযোগের জবাব দেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, কোন চিকিৎসার জন্য কী খরচ হল, এ বার রোগীকে জানাতে বাধ্য থাকবে বেসরকারি হাসপাতাল। বেসরকারি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই বিল আনা হয়েছিল।

Advertisement

মঙ্গলবার দ্বিতীয়ার্ধে অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বিধানসভায় এসি বিভ্রাট লক্ষ করা যায়। অধিবেশন শুরু হয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তৃতা দিয়ে। তখনই এই সমস্যা দেখা দেয়। সেই সময় একে একে অধিবেশনকক্ষের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। অধিবেশনকক্ষে মোট ১২টি দরজা রয়েছে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিধানসভা কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন ।

এই আবহে শুভেন্দু বিলের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দাবি করেন, সংশোধনী বিলে মহিলা চিকিৎসক, নার্স, মহিলা রোগী এবং রক্ষীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা নির্দেশিকা নেই। প্যাকেজ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, “এই বিলে প্যাকেজ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না-পারে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, কারণ ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রোগী এই প্যাকেজে চিকিৎসা করাতে পারবেন। কিন্তু ২ থেকে ৫ শতাংশ রোগী এই ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন না। তাঁদের দায়িত্ব কে নেবে, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।’’

Advertisement

শুভেন্দুর আরও দাবি, এই বিষয়টির সঙ্গে বহু বেসরকারি হাসপাতাল, ডে কেয়ার ইউনিট এবং ওপিডি যুক্ত। তাই স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে বিলটি পাঠিয়ে সমস্ত অংশীদারের মতামত নিয়ে তার পর বিল পাশ করানো উচিত ছিল। তিনি বলেন, “হাসপাতালগুলি যে প্যাকেজ দেবে, তা বিস্তারিত ভাবে সরকারি পোর্টালে প্রকাশ করা উচিত। কোন চিকিৎসার জন্য কত খরচ হবে, এই তথ্য রোগীর হাতে থাকলে প্রতারণার সুযোগ থাকবে না।”

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসার বাজেট দেওয়ার নির্দেশ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “অনেক সময় রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্ট আসতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। তাই এই নির্দিষ্ট সময়সীমা বাস্তবসম্মত নয়।” তাঁর প্রশ্ন, “ই-প্রেসক্রিপশন চালু হলে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা যাবে তো?” সব শেষে তিনি বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল যাতে রোগীদের ঠকাতে না পারে, সে বিষয়ে বিলে আরও কঠোর এবং স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা উচিত ছিল।” রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বে কে থাকবে, তা-ও বিলে নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর।

এর পর নতুন বিলের বিষয়ে বিশদে জানান চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, “বেসরকারি ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে এই বিল। হাসপাতালের বিল বেশি হতেই পারে। কিন্তু রোগীকে জানাতে হবে কিসের জন্য কী খরচ হল। লুকিয়ে কিছু করা যাবে না। দু’দিন বেশি থাকতে হলে হবে। সেই খরচেরও বিশদ তথ্য দিতে হবে। কিন্তু কোন অসুখে কী চিকিৎসা, তার কত খরচ, সেটা জানাতেই হবে।” রাজ্যের মন্ত্রী আরও বলেন, “এটা রোগী পরিষেবার প্রশ্ন। বিজেপি বলছে, সরকার সেটা ঠিক করবে, তা নয়। ঠিক করতে হবে হাসপাতালকেই। কিন্তু রোগীকে সেটা পরিষ্কার জানাতে হবে।’’

আরও দু’টি নতুন বিল আসছে বিধানসভার অধিবেশনে। বুধবার বিধানসভায় পেশ করা হবে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিক্রয় কর (সংশোধনী) বিল ২০২৫’। বুধ ও বৃহস্পতিবার এই বিল নিয়ে আলোচনা হবে। তবে বিজেপি পরিষদীয় দলের অভিযোগ, বুধবার বিল নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও, এখনও তাদের হাতে বিলের কোনও প্রতিলিপি দেওয়া হয়নি। যথাসময়ে বিলের প্রতিলিপি বিরোধীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে তৃণমূল পরিষদীয় দল। আগামী শুক্রবার ‘ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় বিল’ আনা হবে। ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র স্পোর্টস বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২৫’ নিয়ে আলোচনা হবে। মঙ্গলবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠকে এই সূচি চূড়ান্ত হয়েছে ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement