রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীই মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান হচ্ছেন কিনা, এ প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর মিলল না বুধবারও। দলের নবনির্বাচিত কাউন্সিলারদের নিয়ে কলকাতায় এ দিন অধিবেশন করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে তিনি মালদহের নেতাদের জানিয়ে দেন, পুরাতন মালদহ এবং ইংরেজবাজার পুরবোর্ড গঠনের বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তা নেবেন মালদহে দলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। ফলে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু ফের চেয়ারম্যান হতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে এ দিনও ধোঁয়াশা কাটল না।
এ বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি মালদহ যাবেন। ‘‘জেলায় দলের নেতা এবং কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করব। সবার সঙ্গে কথা বলে চেয়ারম্যান পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, কাজটা সহজ হবে না। কৃষ্ণেন্দুকে সামনে রেখে পুরভোটে দল লড়লেও, ফল আশানুরূপ হয়নি। সেই সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুর ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে দলের মধ্যে। তাই ইংরেজবাজারে কৃষ্ণেন্দু বা তাঁর স্ত্রী কাকলিকে চেয়ারম্যান হিসেবে স্বীকার করতে দলেরই একাংশের আপত্তি রয়েছে। দুলাল (বাবলা) সরকার কিংবা অম্লান ভাদুড়ির মতো তৃণমূল নেতাদের নামও চেয়ারম্যান হিসেবে ভাসছে। দল জোর করে কৃষ্ণেন্দুকে চেয়ারম্যান করতে চাইলে ‘ক্রস ভোটিং’ হতে পারে বলে দলেরই অন্দরে কানাঘুষো চলছে।
দলীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার ১১ মে সরকারের পক্ষ থেকে পুরবোর্ড গঠনের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, ১৭ বা ১৮ মে শপথ গ্রহণ হবে। দলীয় কাউন্সিলরদের সে রকমই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ইংরেজবাজার পুরসভায় তৃণমূল দল একক ভাবে ১৫টি আসনে জয়লাভ করেছে। বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা পেয়েছে ১৪টি আসন।
এই অবস্থায় পুরবোর্ড গঠনের বিষয়টি নিয়ে দলের জেলা নেতারা আলাদা আলাদা করে কলকাতায় এসে রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। কেউ কেউ পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেউ বা আবার সুব্রত বক্সির সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করছেন।
পুরাতন মালদহ পুরসভার ২০টি আসনের মধ্যে ১০টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি ১০টির মধ্যে পাঁচটি বিজেপি, দু’টি সিপিএম এবং দলের টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের দু’জন নির্দল হয়ে জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়াও বাম-সমর্থিত নির্দল এক প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিরোধীরা একজোট হয়ে টিকিট না-পাওয়া তৃণমূল সমর্থক বশিষ্ঠ ত্রিবেদীকে চেয়ারম্যান পদপার্থী করে এগোচ্ছেন। তৃণমূলও বসে নেই। দলের অন্দরের খবর, একজন নির্দল সদস্যকে ভাঙিয়ে নিয়ে বোর্ড গঠনের চেষ্টা করছে তৃণমূল। তবে সেখানেও চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। বিদায়ী চেয়ারম্যান বিভূতি ঘোষ তাঁর ভাইপো কার্তিক ঘোষকে চেয়ারম্যান করতে চাইছেন। কিন্তু দলে তাঁর বিরোধীরা তা নিয়ে খুশি নয়।
বুধবারের বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠারেঠোরে জেলা নেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, কোন নেতা কী করছেন সব খবরই কাছে আছে। মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বোর্ড যাতে হাতছাড়া না হয় তার জন্য কড়া বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। তাই মালদহে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্যে সকলেই কৃষ্ণেন্দুর সমর্থনে একতার বুলি বজায় রাখছেন। কিন্তু বুধবারও কলকাতায় ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ বিষয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ না মেলায় আরও সপ্তাহখানেক তা নিয়ে জল্পনা চলবে মালদহের রাজনৈতিক মহলে।