গুজব রুখতে মন্ত্রীর অস্ত্র হোয়াটসঅ্যাপ

গুজব ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম ‘সোশ্যাল মিডিয়া’। গুজবের বিরোধিতায় সেই ‘সোশ্যাল মিডিয়া’-কেই হাতিয়ার করলেন মন্ত্রী।মঙ্গলবার বর্ধমানের পূর্বস্থলীর হেমায়েতপুরে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে জড়ো হন শ’পাঁচেক স্থানীয় বাসিন্দা। নিজেদের ‘স্মার্ট ফোন’ থেকে এক সঙ্গে ‘হোয়াটস্‌অ্যাপে’ গুজবে কান না দেওয়ার বার্তা ‘শেয়ার’ করেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

পূর্বস্থলী থেকে মন্ত্রীর উদ্যোগে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই বার্তা। নিজস্ব চিত্র

গুজব ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম ‘সোশ্যাল মিডিয়া’। গুজবের বিরোধিতায় সেই ‘সোশ্যাল মিডিয়া’-কেই হাতিয়ার করলেন মন্ত্রী।

Advertisement

মঙ্গলবার বর্ধমানের পূর্বস্থলীর হেমায়েতপুরে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে জড়ো হন শ’পাঁচেক স্থানীয় বাসিন্দা। নিজেদের ‘স্মার্ট ফোন’ থেকে এক সঙ্গে ‘হোয়াটস্‌অ্যাপে’ গুজবে কান না দেওয়ার বার্তা ‘শেয়ার’ করেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে, ‘হোয়াটস্‌অ্যাপে’ গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এ দিনই জেলায় দুই সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মন্ত্রীর বার্তার মূল কথা— জনতাকে গুজবে কান না দিতে ও গুজব না ছড়াতে অনুরোধ। আইন হাতে তুলে না নিতে এবং গোলমালের খবর পেলে নিকটবর্তী থানায় খবর দিতে আবেদন। পূর্বস্থলীর ৪৩টি ক্লাবকে এই উদ্যোগে সামিল করা হয়। নাগরিকদের প্রতি মন্ত্রীর ওই বার্তা আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্লাব-কর্তা, সদস্যদের মোবাইলে। সা়ড়ে ১১টা নাগাদ ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ ওই বার্তা নিয়ে হেমায়েতপুর মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন শ’পাঁচেক মানুষ। মন্ত্রী ইঙ্গিত দেওয়া মাত্র মোবাইলের কনট্যাক্ট-লিস্টে থাকা সবাইকে ওই বার্তা পাঠাতে শুরু করেন তাঁরা।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নবকুমার রায় ৪০০ জনকে, বিবেক নন্দী ১৭৯ জনকে, উত্তম ঘোষ ১৭০ জনকে, রাধেশ্যাম সূত্রধর ১৫৪ জনকে ওই বার্তা পাঠিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘যাঁদের মেসেজ পাঠিয়েছি, তাঁদের অনুরোধ করেছি, কনট্যাক্ট-লিস্টে থাকা সবাইকে ওই বার্তা পাঠাতে।’’

বেশ কয়েক দিন ধরেই ‘ফেসবুক’, ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ কিছু ‘শেয়ার’ করা ‘পোস্ট’ বা ‘মেসেজ’ ঘুরছে যে—বিভিন্ন এলাকায় ছেলেধরা, ডাকাত, জঙ্গি ঘুরছে। বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের শ্লীলতাহানিও করছে। সেই গুজবের জেরে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি ও বর্ধমানের কিছু জায়গায় বেশ কিছু ঘটনাও ঘটে গিয়েছে। কালনায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ গিয়েছে এক কীটনাশক বিক্রেতার। সোমবারেও মন্তেশ্বরে ছেলেধরা সন্দেহে হেনস্থা করা হয়েছে এক তরুণীকে। কালনায় ছাগল চোর সন্দেহে আটক করা হয় দুই মোটর বাইক আরোহীকে।

স্বপনবাবু বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার যেমন খারাপ দিক আছে, ভাল দিকও আছে। কে, কী ভাবে ব্যবহার করছে, ব্যাপারটা তার উপরে নির্ভর করে। গুজব রোখার বার্তা বহু জনের মধ্যে একসঙ্গে ছড়িয়ে দিতে এ দিন হোয়াটস্‌অ্যাপ ব্যবহার করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এ দিন আনুমানিক ৪০ হাজার মানুষের কাছে ওই বার্তা গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রীর গুজব-বিরোধী বার্তা দুপুরের মধ্যে পৌঁছয় আমলাদের মোবাইলেও। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মন্ত্রীর এই উদ্যোগে সচেতন হবেন বহু মানুষ।’’ তবে নিজেদের মতো করে সচেতনতা-প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন-পুলিশও। তাদের উদ্যোগে কালনা, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলীতে টোটো, রিকশায় মাইক নিয়ে গুজব-বিরোধী প্রচার চলছে। স্কুলপড়ুয়া, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা-কর্মী, পঞ্চায়েত কর্মীদেরও গ্রামে-গ্রামে প্রচারাভিযানে সামিল করা হয়েছে।

‘সাইবার ক্রাইম’ শাখা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এ দিন পূর্বস্থলী থেকে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং কালনা থেকে এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ তিন জনকে ধরা হয়েছে। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারেরা হলেন পূর্বস্থলীর কামালউদ্দিন শেখ এবং কালনার সুশান্ত বিশ্বাস। দু’জনকেই বরখাস্ত করেছে জেলা পুলিশ। কালনা থেকে ধৃত অন্য দু’জন হলেন— সুরজিৎ কীর্তনিয়া এবং শুভঙ্কর সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন