জমির ‘দাম’ ফেরত চাইতে পারে টাটা

সম্ভাবনা হিসেবে এখন ভেসে উঠছে শুধু জমি লিজের প্রাথমিক খরচটুকু। সূত্রের খবর, সিঙ্গুরের জন্য রাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শুধু ওই বাবদ শ’খানেক কোটি টাকা মতোই ফেরত চাইতে পারে টাটা মোটরস।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২০
Share:

সম্ভাবনা হিসেবে এখন ভেসে উঠছে শুধু জমি লিজের প্রাথমিক খরচটুকু। সূত্রের খবর, সিঙ্গুরের জন্য রাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শুধু ওই বাবদ শ’খানেক কোটি টাকা মতোই ফেরত চাইতে পারে টাটা মোটরস।

Advertisement

সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা সমেত শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা নিয়ে পূর্বতন বাম জমানায় রাজ্যের সঙ্গে টাটা মোটরসের হওয়া চুক্তিতে শর্ত ছিল প্রকল্প ভেস্তে যাওয়া প্রসঙ্গেও। বলা ছিল, টাটারা যদি ওই জমিতে কারখানা গড়তে না-পারে, তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ মূলধনী খরচ (ক্যাপিটাল কস্ট) ফেরত পাবে তারা।

সূত্রের খবর, সিঙ্গুরে মূলত তিন খাতে মূলধনী খরচ করেছে টাটা মোটরস— (১) জমি লিজ নিতে জমা দেওয়া প্রাথমিক থোক টাকা (২) জমিকে কারখানা গড়ার জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে (মূলত জমি ভরাট ও উঁচু করা) লগ্নি (৩) কারখানার শেড তৈরি এবং যন্ত্রপাতির জন্য টাকা ঢালা।

Advertisement

এর মধ্যে প্রথম খাতে খরচ হয়েছিল শ’খানেক কোটি টাকা মতো। সঙ্গে বার্ষিক লিজের অঙ্ক ছিল এক কোটি টাকার আশেপাশে। জমি ভরাট ও উঁচু করতে গুনতে হয়েছিল হাজার দেড়েক কোটি। বাকি টাকা খরচ হয়েছিল কারখানার শেড তৈরি ও যন্ত্রপাতির জন্য।

কারখানার যন্ত্রপাতি শুরুতেই সানন্দে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল টাটা মোটরস। শেডের খরচ তেমন নয়। জমি ভরাটের হাজার দেড়েক কোটি অঙ্ক হিসেবে মোটা। কিন্তু তেমনই তা ফেরত পাওয়ার রাস্তাও লম্বা। কারণ, তার পায়ে পায়ে জড়িয়ে রয়েছে প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতা। যেমন, ওই টাকা ফেরত দিতে আগে মূল্যায়ন করতে হবে ওই কাজের। দেখতে হবে, কোথায় কত জমি ভরাট করা হয়েছে কিংবা তা উঁচু করা হয়েছে কত ফুট। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাটা মোটরস কিছুটা প্রতীকী হিসেবে শুধু লিজ নেওয়ার প্রাথমিক খরচটুকুই ফেরত চাইতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

সিঙ্গুরের বদলে টাটা মোটরসকে রাজ্যের অন্যত্র জমি দেওয়ার কথা বুধবার ফের বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকল্প হাজার একরের সন্ধান দিতে গিয়ে তুলে এনেছেন গোয়ালতোড়ের নাম। তা-ও আবার খাস সিঙ্গুরের মঞ্চ থেকে।

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের বিকল্প জমি তৈরি আছে। গোয়ালতোড়ে হাজার একর রয়েছে। জমি-ব্যাঙ্ক ও জমি-ম্যাপ তৈরি। রঘুনাথপুরেও জমির বন্দোবস্ত আছে। টাটারা আগ্রহী হলে, আলোচনায় বসতে পারি।’’ তাঁর কথায়, এ ছাড়াও খড়্গপুরে ৮০০ একর জমি রাখা আছে। পানাগড়ে আছে ৭০০ একর। টাটা স্টিল, টাটা মেটালিকস-সহ টাটা গোষ্ঠীর অন্যান্য সংস্থার শিল্পও এ রাজ্যে রয়েছে। ফলে শুধু টাটা মোটরসকেই যে লগ্নি করতে হবে, এমন কোনও কথা নেই।

টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রির সঙ্গে সম্প্রতি দু’বার কথা হয়েছে অমিতবাবুর। কলকাতায় এসে খোদ সাইরাসও বলে গিয়েছেন, বিনিয়োগের সুযোগ এলে এ রাজ্যে টাকা ঢালার কথা ভাববেন তাঁরা। তা সে রাজনীতির ছবি যা-ই হোক। তার উপর সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর মিউনিখ সফরে তাঁর সঙ্গে যাওয়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলে সামিল হয়েছিলেন টাটা মেটালিকসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পল এবং টাটা স্টিলের (ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) কর্ণধার টি ভি নরেন্দ্রন। জার্মানির মাটিতে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্যই করেছেন তাঁরা। আহ্বান জানিয়েছেন, লগ্নি করতে এখানে আসার জন্য। তা ছাড়া, সরকারি সূত্রে দাবি, খড়্গপুরে টাটা মেটালিকসের আরও কিছুটা জমি প্রয়োজন। তা নিয়েও রাজ্যের সঙ্গে তাদের কথাবার্তা চলছে।

সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে তাই এক দশক পেরিয়ে এসে সিঙ্গুরের ওই জমি নিয়ে আর খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে না-ও চাইতে পারে টাটা মোটরস। সম্ভবত সেই কারণেই বিনিয়োগের পাই-পয়সা হিসেব না-করে রাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শুধু জমি লিজের প্রাথমিক খরচটুকু ফেরত চাইতে পারে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement