কর কমেছে কয়লার, সস্তা কি হবে বিদ্যুৎ

কিন্তু জিএসটি-র জন্য কয়লা কেনার খরচ যখন কমছে, তখন বিদ্যুতের দামও কমা উচিত!

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম কমতে পারে বিদ্যুতের। তবে কত কমবে বা আদৌ কমবে কি না, তা এখন নির্ভর করছে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থাগুলির উপরেই।

Advertisement

কয়লায় নানা ধরনের করের হার ১২ শতাংশ কমে ৫% জিএসটি বসার পর থেকেই রাজ্য তথা দেশজুড়ে বিদ্যুতের দাম কতখানি কমতে পারে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ মানুষের বক্তব্য, কয়লার দাম বাড়লেই বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায়। আর বিদ্যুৎ-আইন অনুযায়ী জ্বালানির সেই বাড়তি দাম গ্রাহকের বিলে চাপিয়ে তা তুলে নেয় বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। কিন্তু জিএসটি-র জন্য কয়লা কেনার খরচ যখন কমছে, তখন বিদ্যুতের দামও কমা উচিত!

কয়লা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, বর্তমান কর কাঠামোয় বিদ্যুৎ, ইস্পাত, সিমেন্ট প্রভৃতি শিল্পক্ষেত্রের কয়লা কেনার খরচ ন্যূনতম ৩% কমা উচিত। এ ক্ষেত্রে কোনও একটি তাপবিদ্যুৎ সংস্থার কাঁচামাল কেনার খরচ তিন শতাংশ কম মানে টাকার অঙ্কে তা বেশ ভালই। রাজ্যের এক বিদ্যুৎকর্তার মতে, নতুন কর কাঠামোয় কয়লা কেনার খরচ কমলে ইউনিট-পিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমবে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির পদস্থ কর্তাদের একাংশ বলছেন, তাদের কয়লা কেনার খরচ গড়ে ৪-৫% কমবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও ইউনিট পিছু কমপক্ষে তিন পয়সা কমা উচিত।

Advertisement

তবে বিদ্যুৎশিল্প মহলের কাছে এর কোনও ইতিবাচক উত্তর সহজে মিলছে না। বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে নারাজ। শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির কয়েক জন কর্তা জানাচ্ছেন, জিএসটি-র কারণে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ খানিকটা কমতে পারে, সে ক্ষেত্রে তার সুফল গ্রাহকরাও পাবেন।

যে কোনও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮০ শতাংশ কাঁচামালই হল কয়লা। তাই কয়লার দাম বাড়লে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়ে না। অনেক সময়ে বিদ্যুতের বেশি মাসুলের জন্য অনেক বিদ্যুৎ সংস্থাই কোল ইন্ডিয়ার দামি কয়লার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। যে কারণে গত কয়েক বছর ধরে অধিকাংশ রাজ্যই কয়লার দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রের কাছে ‘কয়লা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই অবস্থায় শিল্পমহল থেকে সাধারণ মানুষের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, জিএসটি-র কারণে বিদ্যুতের দাম কমবে না কেন!

বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য একই সঙ্গে জানাচ্ছেন, কোনও কারণে অতীতে বিদ্যুতের দাম কমেছে, এমন ঘটনা মনে পড়ছে না। তাঁদের বক্তব্য, জিএসটি-র কারণে যদি সরল অঙ্ক কষা যায়, তাতে বিদ্যুতের মাসুল কমা উচিত। কিন্তু মাসুল নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরও নানা উপকরণ (বিদ্যুৎ চুরি-সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ক্ষতি) থাকে। যেগুলি মাসুলের সঙ্গে যোগ হয়। তা-ই অর্থনীতির সরল সমীকরণে তা মেলানো কঠিন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি কী অঙ্ক কষবে, তা তাদের উপরেই নির্ভর করবে। এক বিদ্যুৎ কর্তার মতে, দেশের অধিকাংশ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা কোটি-কোটি টাকা লোকসানে চলছে। এই অবস্থায় দাম কমানোর বিষয়টি কতখানি গ্রাহ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে মাসুল নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনগুলি যে হেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সে ক্ষেত্রে তারা মাসুল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।

বিদ্যুৎশিল্প মহলের অনেকে এ-ও মনে করছেন, বিদ্যুৎ মাসুল যদি কমেও, সব মিলিয়ে গ্রাহকদের ইউনিট-পিছু তিন-চার পয়সার বেশি সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা কম। জিএসটি-র বাইরেও কয়লার উপরে টন-পিছু ৪০০ টাকা করে গ্রিন সেস রয়েছে। অন্যান্য রয়্যালটি ও স্থানীয় সেসগুলি কমবে না থাকবে, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। যে কারণে প্রতিটি সংস্থাই এখন কাঁচামালের দাম ও উৎপাদন খরচের তুলনামূলক অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। ফলে শেষ পর্যন্ত মাসুলের উপরে কী প্রভাব পড়বে, তা জানতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে গ্রাহকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন