Teacher Recruitment Scam Case

হৈমন্তী-রহস্য ঘনাচ্ছে! বিলাসী হোটেলের প্যাডে হাতে লেখা ১১ এজেন্টের নাম? নীচে লেখা ১২ কোটি

হৈমন্তী এখন কোথায় আছেন, তা অজানা। তাঁর আদি বাড়ি হাওড়ার বাকসাড়ায়। পাশাপাশি, বেহালায় তাঁর একটি ফ্ল্যাটের হদিস পেয়েছে। তার অদূরে নোংরার স্তূপ থেকে বেশ কিছু কাগজ এবং পুরনো ফাইল মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৭
Share:

যে কুন্তলের কাছ থেকে তদন্তকারীরা হৈমন্তীর নাম পেয়েছিলেন, তিনি দাবি করেন ‘প্রচুর’ টাকা নিয়েছেন গোপাল। তারই একটি অঙ্ক কি ওই চিরকুটে লেখা? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিয়োগ-দুর্নীতিতে অভিনেত্রী-মডেল হৈমন্তী মুখোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসা ইস্তক ঘনাচ্ছে নানা রহস্য। জাগছে নানাবিধ প্রশ্ন। শনিবার নয়া সংযোজন হৈমন্তীর বেহালার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া বিলাসবহুল হোটেলের প্যাড। তাতে লেখা ১১টি নাম এবং নীচে লেখা ১২ কোটি টাকা। তা ছাড়াও মিলেছে আরও একটি চিরকুট। সেখানে টাইপ করা রয়েছে চার টেট প্রার্থীর নাম, রোল নম্বর এবং অ্যাপ্লিকেশন আইডেন্টিটি। উপরে লেখা, ‘‘২০১৪ ট্রেনড পাস ক্যান্ডিডেট (নট ইনক্লুডেড)।’’ তবে কি নিয়োগ দুর্নীতিতে হৈমন্তীর সঙ্গে কোনও যোগসূত্র রয়েছে? শুরু হয়েছে চর্চা।

Advertisement

যে চার নাম পাওয়া গিয়েছে হৈমন্তীর ফ্ল্যাটে। —নিজস্ব চিত্র।

শনিবার নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত গোপাল দলপতির ‘প্রাক্তন’ স্ত্রী হৈমন্তীর বেহালার ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে উদ্ধার হয় এক তাড়া কাগজ। সিরিয়াল নম্বর লেখা কাগজও পাওয়া গিয়েছে। যে সংখ্যাগুলি লেখা রয়েছে, সেগুলি প্রত্যেকটাই ৯ সংখ্যার। যা থেকে ওই কাগজগুলি শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থীদের কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে দু’টি চিরকুট। একটিতে এক, দুই, তিন করে লেখা ১১ জনের নাম। এবং নামের শেষে নীল কালিতে লেখা, ‘১২ কোটি টাকা’। এঁরা কি ‘এজেন্ট’? উঠছে সেই প্রশ্ন। পাশাপাশি অন্য একটি চিরকুটে সরাসরি লেখা আছে ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের নাম। রোল নম্বর দিয়ে যে চার জনের নাম রয়েছে। তাঁরা হলেন বিশ্বজিৎ জানা, সোনালি ঘোষ, মানোয়ার ফারুক এবং সমীর মণ্ডল।

Advertisement

১২ কোটি লেখা সেই নামের তালিকা। —নিজস্ব চিত্র।

কে এঁরা? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে গোপালের সঙ্গে। শুনেই তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন শুনলাম (ফ্ল্যাটে পাওয়া কাগজের বিষয়ে)। কিন্তু এত দিন পাওয়া গেল না। হঠাৎ কী ভাবে এগুলো পাওয়া গেল? কোনও চোর কি এ জিনিস রেখে যাবে?’’ হোটেলের প্যাডে লেখা ১২ কোটি টাকার বিষয়ে গোপালে মোবাইলে বলেন, ‘‘আমি তো ওই হোটেলে কত বার গিয়েছি!’’ যদিও প্যাডে লেখা নাম চিনতে অস্বীকার করলেও একটি নাম শুনে গলার স্বর বদলে যায় গোপালের। তবে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে তিনি দাবি করেন, কাউকেই চেনেন না। বলেন, ‘‘আবার পরে কথা হবে।’’ তার পরেই ফোন কেটে দেন।

তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে আরমানের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই আরমানই নাকি গোপাল। সেই নথির অ্যাকাউন্টে ‘নমিনি’ হিসাবে নাম রয়েছে হৈমন্তীর। আবার সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৭ থেকে মুম্বইয়ের একটি সংস্থার সঙ্গে যোগ রয়েছে আরমান এবং হৈমন্তীর। ঘটনাচক্রে, হৈমন্তী এখন কোথায় আছেন, তা অজানা। তাঁর আদি বাড়ি হাওড়ার বাকসাড়ায়। পাশাপাশি, বেহালায় তাঁর একটি ফ্ল্যাটের হদিস পেয়েছে। ওই বাড়ির অদূরে নোংরার স্তূপ থেকে বেশ কিছু কাগজ এবং পুরনো ফাইল পাওয়া গিয়েছে। সেখানে ২০১৩ সালের একটি ‘শেয়ার অ্যাপ্লিকেশন’ ফর্মও মিলেছে। তাতে আবার ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর’কে লেখা। হৈমন্তীর বাবা সাধনগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে একটি কাগজে। তবে এই দুটি চিরকুট বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ, যে কুন্তলের কাছ থেকে তদন্তকারীরা হৈমন্তীর নাম পেয়েছিলেন, তিনি দাবি করেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘প্রচুর’ টাকা নিয়েছেন গোপাল। তারই একটি অঙ্ক কি ওই চিরকুটে লেখা? উঠছে প্রশ্ন।

এর আগে একাধিক বার তদন্তকারীদের ডাকে হাজির হয়েছেন গোপাল। আবার কখনও প্রয়োজন মনে করলে তাঁকে তলব করা হতে পারে বলে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন