Teachers

ঘরে ঘরে ঘুরে প্রকল্প প্রচার শিক্ষকদলের, প্রশ্নে মুখর বিরোধীরা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘চলুন মাস্টারমশাই, ঘুরি বাড়ি বাড়ি।’

Advertisement

না, করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন না। তাঁরা ঘরে ঘরে যেতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সম্প্রতি এ ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের প্রচারে নেমেছে।

শিক্ষক সংগঠন এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রচারে নামায় বিরোধী দলগুলি সমালোচনায় মুখর হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, করোনার দৌরাত্ম্যের মধ্যে শিক্ষকদের এ ভাবে বাড়ি বাড়ি ঘোরা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অশোক রুদ্র জানান, রাজ্য জুড়ে তাঁদের সংগঠনের ৬০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এই কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ৬৪টি প্রকল্পের কী কী সুবিধা সাধারণ মানুষ পেতে পারেন, জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। “কোন প্রকল্পের সুবিধা কারা পেতে পারেন, কী ভাবে আবেদন করতে হবে, কোথায় গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে এবং এর জন্য যে কোনও টাকা লাগে না— এই সবই ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা,” বলেন অশোকবাবু। তিনি জানান, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী যেমন আছে, রয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানা প্রকল্প, বিধবা ভাতা, শ্রমিকদের পেনশন প্রকল্প, আদিবাসীদের জন্য নানান প্রকল্পও। রাজ্যে ১২ হাজার শিক্ষকদল গড়া হয়েছে। প্রতিটি দলে আছেন পাঁচ জন শিক্ষক। আছেন ১২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষিকাও। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প প্রচারে নেমেছেন ৬০ হাজার শিক্ষক।

বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, ওই ৬০ হাজার শিক্ষক কি অতিমারির মধ্যে কোনও দিন ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন? বাম শিক্ষক সংগঠন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, “শিক্ষকদের এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের প্রচারে নামা নীতিহীনতার পরিচয়। করোনা পর্বে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর দায়িত্ব ওই শিক্ষকেরা কতটা পালন করেছেন? বাম জমানায় আমাদের শিক্ষক সংগঠন কখনও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রচারে দলে দলে রাস্তায় নামেননি। বরং প্রয়োজনে আমরা সরকারের সমালোচনাও করেছি।”

বিভিন্ন দাবিদাওয়ায় শিক্ষকদের আন্দোলনে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের এত শিক্ষককে কখনও দেখা যায় না বলে অভিযোগ বিজেপির শিক্ষা সেলের রাজ্য আহ্বায়ক দীপল বিশ্বাসের। ‘‘৬০ হাজার শিক্ষক কী ভাবে এই প্রচারে যোগ দিলেন? সরকার চাপ সৃষ্টি না-করলে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক এই প্রচারে যোগ দিতেন না,’’ বলেন দীপলবাবু।

এই সব সমালোচনা, অভিযোগ ও প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল শিক্ষক সমিতির নেতা অশোকবাবু বলেন, “আমাদের সংগঠনের শিক্ষক-সংখ্যা লক্ষাধিক। তাঁদের মধ্যে ৬০ হাজার শিক্ষক স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এই প্রচারে নেমেছেন। করোনা-কালে আমাদের সংগঠনের শিক্ষকেরাই সব থেকে বেশি উদ্যোগী হয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে দূরত্ব-বিধি মেনে আট লক্ষেরও বেশি প্রাথমিক পড়ুয়াকে পাঠ দিয়েছেন।”

অশোকবাবু জানান, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরাও গ্রামে গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারে নামছেন। ‘বঙ্গধ্বনি’ নাম দিয়ে ডিসেম্বরে ওই প্রচার কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা। সেই কর্মসূচি শুরু হয়ে গেলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আর আলাদা ভাবে প্রচার না-করে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেই প্রচার করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন