পার্থের সঙ্গে কথা, তবু ধর্না শিক্ষকদের

বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা বেলা ১টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট থেকে মিছিল করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে এগোতে থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৮
Share:

অবস্থান: বাঘা যতীন মোড়ে আন্দোলন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রাজ্যের কাছ থেকে বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস পেয়ে বিকাশ ভবনের পাশে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা অনশন প্রত্যাহার করেছিল ‘উস্তি ইউনাইটেড টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। কিন্তু বেতন বৃদ্ধির সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে স্বচ্ছতা নেই এবং প্রবীণ-অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বেতন খুব কম বেড়েছে বলে অভিযোগ তুলে বুধবার আবার পথে নামল প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওই সংগঠন।

Advertisement

বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা বেলা ১টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট থেকে মিছিল করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে এগোতে থাকেন। বাঘা যতীন মোড়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। রাজা এসসি মল্লিক রোডের ওই মোড়েই বেলা ২টোয় অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে দেন সংগঠনের সদস্যেরা। ঘটনাস্থলে হাজির এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। কিন্তু ওঁরা অনড়।’’

বিকেলে পুলিশকর্তারা সংগঠনের সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস-সহ তিন সদস্যকে গাড়িতে তুলে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে যান আলোচনার জন্য। ঘণ্টাখানেক পরে ফিরে এসে পৃথাদেবী বলেন, ‘‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। উনি আমাদের দাবি মানেননি।’’ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এসসি মল্লিক রোড থেকে উঠে গিয়ে বাঘা যতীনের কাছে চিত্তরঞ্জন দাস শিশু উদ্যানে শুরু হয় অবস্থান-বিক্ষোভ। অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা উঠে যেতে বলে শিক্ষকদের হুমকি দিতে থাকে। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। তার পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে তুলে যাদবপুর থানায় নিয়ে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে ছেলেকে ‘পুড়িয়ে খুন’, ধৃত বাবা

বাম ও কংগ্রেস নেতারা এ দিনই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে জানান, অনশন-আন্দোলনের সময় রাজ্যের দেওয়া আশ্বাস পূরণ করা হয়নি বলেই প্রাথমিক শিক্ষকেরা ফের পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকদের রাস্তায় বসতে হচ্ছে, অবরোধ করতে হচ্ছে, এর চেয়ে লজ্জাজনক কিছু হয় না! কিন্তু রাজ্য সরকার লজ্জিত নয়। আমরা লজ্জা পেয়েছি বলেই রাজ্যপালকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ আর বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু বলেন, ‘‘তখন সরকার যে-আশ্বাস দিয়েছিল, সেই কথা তারা রাখেনি। এটা তো তঞ্চকতা!’’ মান্নান জানান, রাজ্যপাল তাঁদের বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির কথা তাঁর জানা নেই। তবে প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইলে তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন।

সর্বভারতীয় হারে বেতন দেওয়ার পাশাপাশি ১৪ জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলি রদের দাবিতে জুলাইয়ে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের পাশে আন্দোলন শুরু করে উস্তি ইউনাইটেড টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান কিছু বিশিষ্টজনও। পরে ওই শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। তার ভিত্তিতে অনশন তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বেসিক গ্রেড পে খুব কম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ওই সংগঠন ফের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয়। সংগঠনের সম্পাদিকা পৃথাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। প্রবীণ বা পুরনো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন খুবই কম বেড়েছে। আমাদের দাবি, শিক্ষকদের যথাযথ ‘ফিটমেন্ট’ এবং প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘সিনিয়রিটি’র ভিত্তিতে বেতন দিতে হবে।’’

সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হয়েছে, কয়েক মাস আগেই বেতন বেড়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের। বেতন বাড়ানোর দাবি নিয়ে আবার এই ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি অনৈতিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন