ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শৈশব। তাই স্কুলের সময় কমিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন। তাদের বক্তব্য, বিকেল সাড়ে চারটের বদলে চারটেয় ছুটি দিলে পড়ুয়ারা উপকৃত হবে। তবে শিক্ষা দফতরের একাংশের পাল্টা অভিযোগ, শুধু পড়ুয়া নয়, নিজেদের তাড়াতাড়ি ছুটির স্বার্থেও শিক্ষকদের এই দাবি।
শিক্ষা দফতরের খবর, ২০০৮ সালের আগে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে ১০ পর্যন্ত ক্লাস হত। কিন্তু পাঠ্যক্রম শেষ করার জন্য বেলা ১০টা ৫০ থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন বাম সরকার। পালাবদলের পরে ২০১৩ সাল নাগাদ কম বহরের নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি হলেও স্কুলের সময় অপরিবর্তিত থাকে। বাম আমলের স্কুল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে বলেন, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে ক্লাসের সময় বাড়ানো হয়েছিল। পরবর্তী কালে সেটাই রয়ে গিয়েছে।’’
শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী, বছরে পড়ুয়াদের এক হাজার ঘণ্টা ক্লাস করতে হবে। সপ্তাহে ২৬ ঘণ্টা করে ক্লাস হলেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব। শিক্ষকদের দাবি, বর্তমানে সপ্তাহে ৩১ ঘণ্টা ক্লাস হয়। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে ৫ ঘণ্টা অতিরিক্ত। তার বদলে বিকেল চারটেয় ছুটি দিলে পড়ুয়ারা খেলাধুলোর সময়ও পাবে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উচিত আগের নিয়মে ফিরে যাওয়া। তা হলে পড়ুয়ারা প়ড়া ও খেলা দু’টোই বজায় রাখতে পারবে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়ে লিখিত আবেদন জানানো হবে।’’
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিকেল চারটেয় ক্লাস শেষ করা উচিত। শিক্ষার প্রকৃত উন্নয়ন করতে হলে ৭০ হাজার শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন।’’
তিনি জানান, গ্রামের অধিকাংশ পড়ুয়া বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যায়। শীতকালে সাড়ে চারটের পর ছু’টি হলে বাড়ি ফিরতেই সমস্যা হয়। অনেক ছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলের সময় কাটছাঁটের জন্য আলোচনা ও মতামতের প্রয়োজন। তড়িঘড়ি এ বিষয়ে সিদ্ধাম্ত নেওয়া ঠিক হবে না।’’ স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য বলছেন, পাঠ্যক্রম শেষ করার সময়সীমা মাথায় রেখেই স্কুলের সময় ঠিক করা হয়েছে। তাঁদের একাংশের দাবি, অনেক শিক্ষকই দূর থেকে স্কুলে আসেন। সাড়ে চারটেয় ছুটি হলে বাড়ি ফিরতে এবং প্রাইভেট টিউশন করতে সমস্যা হয়। তাই পড়ুয়াদের সামনে রেখে স্কুলের সময় কমাতে চাইছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। যদিও সংগঠনের কর্তা এই অভিযোগ মানতে চাননি।