ধুমধাড়াক্কা ছেড়ে শীতের ব্যাটে ঢিমেতেতালা

শীতের ‘পাওয়ার প্লে’ শুরু হয়েছিল পৌষের শেষ বেলায়। মাঘ-পয়লাতেও অব্যাহত ছিল তার ধুন্ধুমার দাপট। কিন্তু খুব দ্রুত খেলার ধাঁচ বদলাচ্ছে সে। হাওয়া অফিসের খবর, আগামী কয়েক দিন টি-টোয়েন্টির বদলে টেস্ট ম্যাচের শিল্প দেখা যাবে শীতের ব্যাটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

শীতের ‘পাওয়ার প্লে’ শুরু হয়েছিল পৌষের শেষ বেলায়। মাঘ-পয়লাতেও অব্যাহত ছিল তার ধুন্ধুমার দাপট। কিন্তু খুব দ্রুত খেলার ধাঁচ বদলাচ্ছে সে। হাওয়া অফিসের খবর, আগামী কয়েক দিন টি-টোয়েন্টির বদলে টেস্ট ম্যাচের শিল্প দেখা যাবে শীতের ব্যাটে। কনকনে ঠান্ডার বদলে মিলবে মোলায়েম শীতের আরাম।

Advertisement

তা হলে কি হাউইয়ের মতো জ্বলে উঠেই শীতের ধুন্ধুমার ব্যাটিং এ বারের মতো শেষ হয়ে গেল?

একেবারে হতাশ করছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা তাকিয়ে আছেন কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ আর উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের আবহাওয়ার দিকে। সেখানে যত বেশি তুষারপাত হবে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব ভারতে আর এক দফা জব্বর শীতের সম্ভাবনা বাড়বে। খবর এখনও সেই সম্ভাবনার অনুকূলেই। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং কাশ্মীরের পাহাড়ে ফের তুষারপাত শুরু হয়েছে। সেখান থেকে নেমে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাস যদি আর এক বার মধ্য ভারত হয়ে পূর্ব ভারতের দিকে ধেয়ে আসে, তা হলে আগামী সপ্তাহে আর এক দফা শীত তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার সুযোগ পাবেন বঙ্গবাসী। তবে হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া যে পূর্ব ভারতের দিকে ধেয়ে আসবেই, তার কোনও গ্যারান্টি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন এক আবহবিদ।

Advertisement

হিম-হাওয়ার চালচলনের উপরে সে-ভাবে আস্থা রাখতে পারছে না হাওয়া অফিস। কেননা শুক্রবার থেকে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গে যে-তীব্র উত্তুরে হাওয়া বইছিল, সোমবার সকাল থেকে তা আর নেই। তার ফলে কলকাতায় এ দিন আর তেমন কড়া শীত অনুভূত হয়নি। তবে মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ডিগ্রি কম) আটকে আছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, এ দিন রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গাতেই রাতের তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে।

তবে এ দিনও বীরভূম আর পুরুলিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বীরভূমের শ্রীনিকেতন এবং পুরুলিয়ায় এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাত ডিগ্রি। উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্সেও রাতের তাপমাত্রা ৬-৭ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এ দিন থেকে সেখানে উত্তুরে হাওয়ার দাপট কিছুটা কমেছে। তার জেরে আজ, মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের আশ্বাস, ‘‘আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও শীত একেবারে বিদায় নেবে না। কেননা তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে উঠবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।’’

গোটা ডিসেম্বরে ঝিমিয়ে ছিল শীত। পৌষের শেষ লগ্নে এসে কনকনে ঠান্ডায় কিছুটা ইচ্ছেপূরণ হয়েছিল শীতপ্রত্যাশী বাঙালির। কিন্তু শীতের ব্যাটে হঠাৎ ঢিমেতাল দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, পৌষসংক্রান্তি বা মাঘ মাসের প্রথম দিনটায় শীত যে-বাঘা দাপট দেখিয়েছে, চলতি মরসুমে সেটা কি আর দেখা যাবে না?

শীতের বাঘা দাপট ফের এ-যাত্রা মিলবে কি না, কাশ্মীরে চোখ রেখেই তার উত্তর হাতড়াচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পাকিস্তান থেকে ফের একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া) কাশ্মীরে ঢুকেছে। তার ফলে সমানে তুষারপাত হয়ে চলেছে উত্তর ভারতের পাহাড়ে। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, ঝঞ্ঝা হাজির হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা প্রাথমিক ভাবে সামান্য বাড়বে। বাধা পাবে উত্তুরে হাওয়া। তবে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কেটে গেলে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠবে উত্তুরে হাওয়া। সেই সুবাদে আবার এক দফা কনকনে ঠান্ডা পড়তে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। ‘‘কিন্তু ঝঞ্ঝার মতিগতি বিগড়ে গেলে মুশকিল। উত্তর ভারত থেকে সে যদি এ দিকে বয়ে আসতে থাকে, তা হলে দ্বিতীয় দফায় কনকনে ঠান্ডার আশা আর বিশেষ থাকবে না,’’ বলছেন এক আবহবিজ্ঞানী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন